গাংনীর পীরতলায় গণসমাবেশে আসাদুজ্জামান বাবলু ।। মানুষের কণ্ঠরোধকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দ্রুত ফাঁসি দিতে হবে
এম চোখ ডট কম, গাংনী:
বিগত ১৭ বছর দেশের মানুষের চোখ কাল কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিল ফ্যাসিবাদীর মূলহোতা শেখ হাসিনা। মানুষের কণ্ঠরোধ করে এবং লাশের উপরে সে অবৈধভাবে ক্ষমতায় ছিল। গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে তার পতন হয়েছে। তবে তার অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে এদেশে আবারও ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। তাই শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রæত ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে। এ দাবি করেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে গাংনী উপজেলার পীরতলা স্কুল মাঠে ঐতিহাসিক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি উপরোক্ত দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে এবং পৌর ২ নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি সুলেরী আলভীর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন মেহেরপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহববুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
প্রধান অতিথি বক্তৃতায় সরকারের উদ্দেশ্যে আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিতাড়িত করার জন্য দেশের মানুষকে সংগঠিত করে আসছেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মহানায়ক তারেক রহমান। তিনিই আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড। তাই দ্রæততম সময়ের মধ্যে তার মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাকে দেশে ফিরিয়ে না আনলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।
বক্তৃতায় আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, বিগত ১৭ বছরের অপকর্মের জন্য শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার করতে হবে। শুধু ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেই হবে না। অপকর্মের জন্য এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এখন জনদাবি হয়ে উঠেছে।
গাংনী উপজেলায় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কাজিপুর ইউনিয়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিগত ১৭ বছর বঞ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ইউনিয়নে ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ছিল। এতে বিএনপির লোকজন টিসিবি, ভিজিডি, জিজিএফ, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই অতি সত্ত¡র এই ইউনিয়নের তালিকা বাতিল করতে হবে। দলীয় বিবেচনার উর্দ্ধে উঠে যারা গরিব মানুষ তাদের নামের তালিকা করে এসব সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি করেন তিনি।
কাজিপুর ইউনিয়নের যানবাহন বামুন্দী ক্যাম্পে রিক্যুইজিশন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কাজিপুর ইউনিয়নের অটো গাড়ীগুলো বামন্দী ক্যাম্প নিয়ে যায় ডিউটির জন্য। বামুন্দী ক্যাম্প বামুন্দী ইউনিয়ন থেকে গাড়ি নিবে। কাজিপুর ইউনিয়নে গাড়ী কাজিপুর ইউনিয়নের পুলিশ ক্যাম্পে যাবে। কাজিপুর ইউনিয়নের কোন গাড়ী আজ থেকে বামন্দী ক্যাম্পে যাবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
৫ আগষ্টের আগে ২৬ জুলাই পুলিশের হাতে গ্রেফতারের ঘটনা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, আমি জেলখানাতে বসে শুনেছি আমার মেয়ে ঢাকার রাজপথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যেকটি আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। জেলখানাতে আমাদের অবস্থা এমন হয়েছিল যে, যদি শেখ হাসিনার পতন না হতো তাহলে কতদিন যে জেলখানায় থাকা লাগতো তার কোন হিসেব ছিল না। জুলুম, নির্যাতন, মামলা, হামলা সহ্য করে ১৭ বছর পার করেছে বিএনপি। তবে শেখ হাসিনার পতন হলেও আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। গণতান্ত্রিক দল বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশের মানুষ আন্দোলনের সুফল পাবে না। তাই নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামির কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ গ্রহণের আহবান জানান আসাদ্জ্জুামান বাবলু।
বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের লোকজনও নানা রকম মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বক্তব্যে পরিবারের সদস্যদের সেই দুঃসহ স্মৃতিকথা তুলে ধরেন আসাদুজ্জামান বাবলুর সহধর্মীনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা উলামা দলের সভাপতি ইনামুল হক, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শাহজাহান সেলিম, উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান হকা, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজমুল হুসাইন, যুবদল নেতা সাহিবুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি রেজওয়ানুল ইমন, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মনিরুজ্জামান মনি, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আমিনুল বারী মোতালেবসহ স্থানীয় ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।