Table of Contents
গাংনী বাস স্ট্যান্ডের নকশা ও এর বাস্তবায়ন নিয়ে যা হচ্ছে
এম চোখ ডটকম, গাংনী :
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের চলমান রাস্তা প্রশস্থকরণ ও সংস্কার কাজ নিয়ে গাংনীর জনমনে নানা প্রশ্ন। গেল কয়েকদিন ধরে বাস স্ট্যান্ডে রাস্তার কাজ বন্ধ হওয়ায় প্রশ্নের ডালপালা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নির্মান কাজ নিয়ে চলতি সপ্তাহে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে নকশা অনুযায়ী বাস স্ট্যান্ড এলাকার নির্মান কাজ করার জোরালো দাবি জানিয়েছেন সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক ও গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী। অপরদিকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাবেক এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন এবং ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক হাসান।
স্থানীয়দের অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং গোল চত্ত¡র উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসলে নকশা কি ছিল আর গোল চত্ত¡র নিয়ে কেন এত কথাবার্তা ? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি আমরা।
গোল চত্বর :
মূলত গাংনী বাস স্ট্যান্ডের বর্তমান যে ছোট্ট গোলকার আইল্যান্ডটি রয়েছে তা তিন রাস্তার মিলিতস্থান। মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া এবং হাটবোয়ালিয়ার দিকে তিনটি রাস্তা বিদ্যমান। এই তিন রাস্তার মিলিত স্থান থেকে সহজে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের জন্য এখানে ত্রিভূজ আকৃতির একটি আইল্যান্ড রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নকশাতে। তাহলে মানুষের মাঝে কেন গোল চত্ত¡রের বিষয়টি আসলো ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে একটু পেছনে যেতে হবে। ২০১৯-২০২০ সালের দিকে যখন মেহেরপুর-কুষ্টিয়ার এই সড়কটি প্রশস্থ ও সংস্কারের জন্য চেষ্টা হচ্ছিল তখন রাস্তাটি গণমুখী করার লক্ষ্যে মেহেরপুর-২ আসনের তখনকার সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন নানাভাবে বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে এখানে একটি গোল চত্ত¡র এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হবে। ফলে মানুষের মনে গোল চত্ত¡রের স্বপ্ন গেঁথে যায়। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নকশায় গোল চত্ত¡রের স্থলে ত্রিভূজ আকৃতির একটি আইল্যান্ড জায়গা পেয়েছে। তাই এ নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ভাবছেন হয়তো নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। আসলে নকশার পরিবর্তন নয় গোল চত্ত¡রেরস্থলে যথার্থভাবেই ত্রিভূজ আইল্যান্ড রেখেছেন প্রকৌশলীরা। তবে পৌরসভার দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে আরও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। গোল চত্ত¡রের চেয়ে ত্রিভূজ আকৃতির আইল্যান্ড যথাপোযুক্ত বলে গোল চত্ত¡র রাখা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকৌশলীরা।
নকশায় কি আছে ?
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি নকশা বৃহস্পতিবার রাতে পোস্ট করেছেন গাংনীর অনেকে। যা প্রকৃত নকশা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নকশায় রয়েছে ত্রিভূজ আকৃতির একটি আইল্যাÐ, একটি বাস বে এবং কুষ্টিয়া সড়ক থেকে হাটবোয়ালিয়া সড়কে যাতায়াতের জন্য সার্ভিস লেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের যে নকশা রয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যমান যাত্রী ছাউনির পেছনের আরও কিছু অংশ পর্যন্ত জমি প্রয়োজন। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যাত্রী ছাউনি ভাঙ্গা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়ায় নকশা বাস্তবায়ন নিয়ে গভীর এক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধানের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা সমন্বয়ন কমিটির মাসিক সভায় নকশা অনুযায়ী বাস স্ট্যান্ডে সড়ক নির্মানের যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জোর দাবি জানান গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। তিনি বলেন, এ সড়কটি বর্তমান সরকারে দৃশ্যমান উন্নয়নের প্রতীক। গাংনীর মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের ফোর লেন আর বাস স্ট্যান্ড এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন। তাই নকশা অনুযায়ী নির্মান কাজ সম্পন্ন করার জোর দাবি জানান তিনি।
সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী। এ বিষয়ে তিনিও নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নের পক্ষে দৃঢ় মতামত প্রকাশ করেন।
বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা হচ্ছে উল্লেখ করে মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেইভাবেই নকশা করা হয়েছে। যা জনগণের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করছি। সরকারের উন্নয়ন ধারা অব্যহত রাখা এবং জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে যাত্রী ছাউনি অবশ্যই ভাঙ্গতে হবে। তা না হলে নকশার বাস্তবায়ন হবে না। তাই জস্বার্থে কোন কিছু ভাঙ্গা বা অপসারণ করতে হলে তা অবশ্যই বকরতেই হবে। এটা আমাদের গাংনীরবাসীর দাবি।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে নকশা পোস্ট করেছেন গাংনী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক হাসান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের জন্য। উন্নয়নের স্বার্থে কোন কিছু ভাঙ্গতে হলে তা অবশ্যই করতে হবে। নকশা অনুযায়ী কাজ না হলে গণআন্দোলন করে তা আদায় করার কথা জানালেন তিনি।
ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় :
বেশ কিছুদিন থেকেই গাংনী বাস স্ট্যান্ডের ফোরলেন ও অন্যান্য নির্মান কাজ নিয়ে গাংনীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিবাদী পোস্ট করে যাচ্ছেন। পোস্টকারীদেরও একই দাবি। নকশা অনুযায়ী সকল নির্মান কাজ সম্পাদন করতে হবে।
এদিকে চলমান সমস্যা নিয়ে গাংনী বাস স্ট্যান্ড এলাকার বর্তমান অবস্থার ও নকশার বাস্তবায়ন নিয়ে সরেজমিন একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এ প্রসঙ্গে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে লিখিত নির্দেশনা পেলে সরেজমিন প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।