এম চোখ ডট কম, ডেস্ক:
প্রাকৃতিক সম্পদ আদায় রয়েছে নানা উপকার। মসলা হিসেবে তরকারিতে ব্যবহারের পাশাপাশি ঔষধি হিসেবেও ব্যবহার হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক আদার গুনাগুন ও উপকারিতা।
Table of Contents
বাংলাদেশে আদা : Ginger in Bengali
মসলা হিসেবে আদার বেশ কদর রয়েছে। চায়ের সাথে কিংবা গরম পানি আর মধুর সাথে আদা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এই আদা। আদার গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলে বিভিন্ন ভাবেই এর ব্যবহার করা যায়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন এই প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধী। আদাকে তাই সব রোগ নিরাময়ের দাদা বলা হয়ে থাকে।
আদার উপকারিতা: ginger benefits in bengali
আদার গুনাগুন, উপকারিতা ও এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন সিনিয়র চিকিৎসক এমকে রেজা। তিনি বলেন, আয়রণ, পটাশিয়াম, ম্যানসেশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, ক্যালশিয়া, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬, ইওসি এ রয়েছে আদায়। ফলে আদা সব ধরনের রোগ নিরাময়ের জন্য কাজে লাগে। বিভিন্ন বসয়ী মানুষ আদা খেতে পারেন।বহু বাছর আগে থেকেই বাংলাদেশে আদা এর বহৃবিধি ব্যবহার হয়ে আসছে।
বদহজম সমস্যায় আদা:
পেটফাঁপা, বদহজম, আমাশয়, পেটব্যাথা এটা মানুষের সাধারণ সমস্যা। আপনার পরিবারের যে কারও এই সমস্যা হতে পারে। তো আপনার হাতের কাছেই রয়েছে এ সমস্যার দারুণ সমাধান। এক চা চামচ আদা এক গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। খাওয়ার পরে এই আদা পানি খেতে হবে। পেটব্যাথা, পেটফাঁপা, আমাশয়, বদহজম এসব দূর হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন ধরে যদি এ সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আদা, মধু ও লেবুর রস একত্রে কাপ কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দিন ও রাতে নিয়মিত খেতে হবে।
সর্দি কাশিতে করণীয়:
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারনে সর্দি, কাশি আক্রমণ করে। আদায় থাকা বিপুল পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সর্দি, কাশি নিরাময়ে গরম পানির সাথে আদা খাওয়া দারুণ একটি চিকিৎসা। গলায় যদি ব্যথা থাকে তাও আদার কারনে সেরে যাবে। তাই সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা উপশমের জন্য গরম পানির সাথে আদা মিয়ে চায়ের মতো করে খেতে হবে। এতে খুব তাড়াতাড়ি নিরাময় হয়।
কালোজিরা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
মনোসংযোগ বৃদ্ধির ঔষধ:
আদা ও হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা স্নায়ুর কাজে বিরাট উপকারি। আদা ও হলুদ দিয়ে তৈরী চা স্লায়ুর কাজে লাগায় মস্তিকে শক্তি বৃদ্ধি করে। অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ মস্তিকের টিস্যূকে সাহায্য করে তাই অরিক্তি চাপ মস্তিকে পড়ে না। অতএব, আদা খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে।
হৃদরোগ নিরাময়ে আদা:
আজকাল হৃদরোগ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘরে বসে এই হৃদরোগ নিরাময় হতে পারে আদায়। হৃদরোগে আক্রান্ত কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ নেই এমন মানুষ এক চা-চামচ আদা, লেবু ও মধু গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুই বার খেতে পারেন। চায়ের মতো করে বেশ কয়েকদিন খাওয়ার পরে ফলাফল বুঝতে পারবেন। তবে নিয়মিত খেতে হবে।
ব্যথা নিরাময়ে:
মাথা ব্যথা, সাইনাস, গলাব্যথা ও মাইগ্রেনের ব্যথায় আদা খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক উদাপান। লবণ দিয়ে কাঁচা আদায় চিবিয়ে খেলে দ্রুত ব্যথা কমে যায়। তবে এ ব্যথা সারতে হলে নিয়মিত সকাল ও বিকেলে এক চামচ আদা, লেবুর রস ও মধু গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও গরম পানিতে আদা দিয়ে খেলে বমি বমি ভাব ও জ¦র সেরে যায়।
হাঁপানি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা :
হাঁপানি এখন অনেকটাই কমন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়াভাবেই চিকিৎসা নিতে পারেন। প্রতিদিন দুই বেলা এক কাপ আদা, লেবু ও মধু এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। চায়ের মতো করে এভাবে নিয়মিত পান করলে হাঁপানি দূর হয়ে যাবে। ফুসফুসের ধমনিতে সংক্রমণের ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হয়। এ কষ্ট থেকে মুক্তি দিবে আদা, লেবু আর মধু। অপরদিকে এ পদ্ধতিতে পান করলে কাশি ও কফ দূর হয়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ :
আপনার বাড়িতে মা বাবা কিংবা অন্য কেউ হয়তো উচ্চ রক্তচাপে (হাই ব্লাড প্রেসার) ভুগছেন। তাদের জন্য আদা চিকিৎসা দিতে পারেন। এক চামচ আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দুই বেলা পান করাতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
আদা লিভারকে করে শক্তিশালী:
মানবদেহের জন্য লিভার ও পাকস্থলীয় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আদা গুঁড়া, মধও আমলকির গুঁড়া মিশিয়ে প্রতিদিন তিনবেলা চায়ের মতো করে খেলে পাকস্থলি ও লিভার শক্তিশালী হয়।
ওজন কমাতে আদা:
আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বডি মাস ইনডেক্স কমাতে সাহায্য করে। বডি মাস ইনডেক্স বেড়ে গেলে মানুষের ওজন বেড়ে যায়। চায়ের সাথে পান কিংবা অন্যভবে আদা খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আদা, লেবু রস ও মধু গরম পানিতে নিয়মিত পান করলে ওজন কমতে থাকে।
আদা সম্পর্কে প্রায় সকলেরই জানা। আমাদের পূর্বসূরীরা এর ব্যবহার করে আসছেন। আদার গুনাগুন সম্পর্কে মানুষ সচেতন তাই বিভিন্নভাবে খাওয়ার প্রচলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঁচা বা শুকনো আদা পিষে বা ছেঁচে খেলে উপকারিতা বেশি। যখনই খাবেন তখনই এটা তৈরী করে নিন তাহলে উপকার বেশি হবে। আদা, লেবু আর মধু একসাথে খেলে উপকার বেশি। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে মধু এড়িয়ে যেতে হবে। প্রাকৃতিক এ নিয়ামক খাওয়ার মাধ্যমে রোগ নিরাময়, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে।
-ডা: এমকে রেজা
সিনিয়র মেডিকেল অফিসার
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
গাংনী, মেহেরপুর।
1 comment
[…] […]