উচ্চফলনশীল জাত নিয়ে স্বদেশ সীডের ব্যতিক্রমি উদ্যোগ
এম চোখ ডট কম, ডেস্ক:
১৯৯৪ সালে এদেশে যাত্রা শুরু করে ব্রি ধান ২৮। আস্থার প্রতীক হয়ে চাষীদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করছে এই জাতটি। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সেই জাত আজ নানা রোগে আক্রান্ত। অপরদিকে কম ফলন আর ধান পড়ে যাওয়ায় কৃষকের লোকসান হচ্ছে। ব্রি ধান ২৮ এর পরে ব্রি ধান ২৯, ব্রি ধান ৬৩, ব্রি ৮১, ব্রি ধান ৭৪, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৮৬ ব্রি ৮৯সহ আরও বেশ কয়েকটি জাত এসেছে। যা বোরো মৌসূমে ধান আবাদের সব হিসেবে উল্টে দিয়েছে। হেক্টরে প্রায় ১০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম এসব জাতগুলো। অথচ অনেক কৃষক আজও সেই আঠাশ ধানে পড়ে আছে। সেই সকল কৃষকরদেরকে উচ্চফলশীল ধান আবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে স্বদেশ সীড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অন লাইন ও অফ লাইনে প্রচারণার মধ্য দিয়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এসব উচ্চফলনশীল জাতের ধান বীজ। যা ইতিমধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছ। এছাড়াও ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি গম ৩৩, উচ্চফলনশীল বারি গম ৩০সহ অন্যান্য জাত সম্প্রসারণে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে স্বদেশ সীড।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার সাহাবুদ্দীন আহম্মেদ জানান, অনেক সময় চাষীরা উচ্চফলনশীল জাতের ধান আবাদ করতে ইচ্ছে করলেও বীজ অভাবে তা সম্ভব হয় না। স্বদেশ সীড প্রতি মৌসূমে নতুন জাত নিয়ে আসছে। তাদের বীজের মান অত্যান্ত ভালো। ব্রিডার বীজ থেকে তারা ভিত্তি এবং পরবর্তীতে প্রত্যয়িত বীজ তৈরী করে নায্য মুলে চাষীদের কাছে সরবরাহ করছে। প্রতিষ্ঠানটির এ কার্যক্রমের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাতের ধান আবাদের চাষীরা আগ্রহী হচ্ছেন। এই কার্যক্রম চালু রাখা গেলে ধান উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের কৃষক মিলন হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ২৮ ধান আবাদ করা হয়। কিন্তু আঠাশ ধান পড়ে যায় তাই ফলন কমে যায়। স্বদেশ সীডের কর্মীদের পরামর্শে গেল কয়েক বছর ধরে ব্রি ধান ৬৩ ও ব্রি ধান ৮১ আবাদ করছি। এ জাত দুটিতে ফলন যেমনি বেশি তেমনি আঠাশের বেয়ে বেশি দরে ধান বিক্রি হয়। এখন আর আঠাশ ধান আবাদের প্রয়োজন হচ্ছে না।
স্বদেশ সীড সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ২৩ জেলায় বীজ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এসব জেলায় নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাতের মানসম্মত বীজ পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রতি মৌসূমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাষীদের কাছে বীজ পৌঁছে যায়। এসব চাষীদের সফলতায় প্রতি মৌসূমে চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে সমায়োপযোগী উচ্চফলনশীল জাতগুলো চাষীদের কাছে পৌঁছুনো গেলে চাষীরা যেমনি লাভবান হবে তেমনি দেশে ধান উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করেন স্বদেশ সীডের কর্মকর্তারা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, স্বদেশী সীড যে কর্মসুচী গ্রহণ করেছে তা কৃষি বিভাগের জন্য বেশ সহায়ক। কারণ আমাদের দেশের চাষীরা ট্রাডিশন থেকে সহজে বের হয় না। চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে স্বদেশ সীড যেভাবে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধান আবাদ করা হচ্ছে তা কৃষি বিভাগের জন্য বেশ সহায়ক।