কালোজিরাকে বলা হয় সর্বরোগের মহোঔষধ। মৃত্য বাদে সব রোগ নিরাময় হয় বলে চিকিৎসকদের অভিমত। এছাড়াও ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকেইও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সহজপ্রাপ্তি আর কম দামে পাওয়া এই মহামূল্যবান কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কেই আজকের এই লেখা।
Table of Contents
কালোজিরা কি :
কালোজিরার বোটানিক্যাল নাম হচ্ছে নাইজিলা সাটিভা Nigela sativa । দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় কালোজিরার আদিনিবাস। Fennel flower, Nutmeg flower, Roman Coriander, Blackseed or Black caraway. এবং বাংলায় কালোজিরা, কালিজিরা, রোমান ধনে, নিজেলা, কালঞ্জি এবং কালো কেওড়া নামেও ডাকা হয়। এটি মূলত এটি মসলা জাতীয় ফসল। পাঁচ ফোড়নের সাথে কালোজিরা অন্যতম উপদান হিসেবে ব্যবহার হয়। কবিরাজী, ইউনানি, আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা এবং প্রশাধনীতে ব্যবহার হয়। শুকনো বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে তা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়।
সুত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস
কালোজিরা নিয়ে হাদিস :
মুসলিম, হাদিস ৫৬৫৯ এ বর্ণিত মৃত্যু ব্যতিত সব রোগের উপশম আছে কালোজিরায়।
কালোজিরার উপাদান :
কালোজিরার উপকারিতা নিয়ে লিখেছেন ডা: এম কে রেজা। তিনি বলেন, কালোজিরার প্রধান উপাদান হচ্ছে স্নেহ, ভেজষ তেল, চর্বি, শর্করা, ভিটামিন, খনিজ ও আমিষ। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে কালোজিরার ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে রোগভেদে এর ভিন্ন ব্যবহার ও প্রয়োগ মাত্রা রয়েছে।
কালোজিরা ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি:
কালোজিরা নিয়ে ১৯৬০ সালে মিশরে গবেষণা হয়। এছাড়াও আমেরিকা ও জার্মান বিজ্ঞানিদের গবেষণা রয়েছে। প্রতিটি গবেষণায় উঠে এসেছে কালোজিরার বিষ্ময়কর গুনাগুন ও এর উপকারিতা। Medical Science Monitor Journal প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালোজিরা নিয়মিত খেলে শিশুদের হৃদরোগে আক্রান্ত ও মৃগীরোগ নিরাময় হয়ে থাকে। এটি শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণু ধ্বংস করে এবং কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কালোজিরা হচ্ছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এছাড়াও কালোজিরার তেল শরীর থেকে কোলস্টেরেল কমাতে পারে এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কালোজিরার উপকারিতা:
কালোজিরার উপকার লিখে শেষ করা যাবে না। আমাদের দেশের মানুষ পানের সাথে, তরকারির সাথে, পানিতে ভিজিয়ে কালোজিরা খেয়ে থাকেন। এছাড়াও কালোজিরার নির্যাস ও কালোজিরার তেল ব্যবহার করা হয়। কালোজিরা, মধু এবং তুলসিসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে এটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
কালোজিরা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের ভেতরে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে এই কালোজিরা। ফলে অঙ্গ-প্রতঙ্গ সতেজ থাকে।
চুলপড়ারোধে কালোজিরা :
চুল পড়ার সমস্যা অনেকের আছে। চুল হচ্ছে মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত। টাক মাথা নিশ্চয় কারও পছন্দ নয়। বিশেষ করে মেয়েদের চুল পড়া সমস্যা বেশি দেখা দেয়। চুলে শ্যাম্পু করার পর এক সপ্তাহ ধরে কালোজিরার তেল লাগালে চুল পড়া কমে যাবে। অতএব, মাথা ও কপাল ব্যথা নিরাময়ে এর তেল মালিস করতে হবে।
ডায়াবেটিস, হাঁপানি ও হৃদরোগে কালোজিরা:
বাড়িতে বয়োবৃদ্ধ পিতামাতা কিংবা অন্য কেউ হাঁপানিতে কষ্ট পাচ্ছেন। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা অন্য বয়সী মানুষেরও থাকতে পারে। এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরার তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বুকে ও পিঠে কালোজিয়ারা তেল মালিশ করে দিন হাঁপানি কমে যাবে। অপরদিকে, কালোজিরার চুর্ণ নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়াও কালোজিরার চুর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে দু’বেলা নিয়মিত সেবন করলে হৃদরোগ উপশমে উপকার পাওয়া যায়।
জেনে নিতে পারেন আদার গুনাগুন ও উপকারিতা
স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা :
ছেলেমেয়েদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে বাবা মা অনেক চেষ্টা করেন। আবার বয়সের ভারে মানুষের স্মরণশক্তি হ্রাস পেলেও বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। কালোজিরা স্মরণশক্তি বা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অব্যার্থ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। কালোজিরার এন্টিসেপটিক মস্তিকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও মেধাবিকাশে কাজ করে থাকে। এজন্য, ভালো ফলাফলের জন্য এক কাপ কমলা বা পুদিনা পাতার রসের সাথে এক চা চামচ কালোজিরা তেল নিতে হবে। যা চায়ের সাথে পান করতে হবে। নিয়মিত পান করলে ভালো ফলাফল মিলবে।
জ্বর, সর্দি, গ্যাস্টিক ও ব্যথা নিরাময়ে কালোজিরা :
সকাল ও সন্ধ্যায় লেবুর রসের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে খেলে জ্বর সেরে যায়। গ্যাস্টিক সমস্যা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়ায় কষ্ট। তাদের জন্য কালোজিরা একটি মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। দুধের সাথে কালোজিরার তেলা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে বাসি পেটে খেলে গ্যাস্টিক দূর হয়ে যায়।
এদিকে ব্যথা বেদনায় কালোজিরার তেল ভালো কাজ করে। হাঁটু ও কোমরের ব্যথাস্থলে কালোজিরার তেল নিয়মিত মালিশ করলে ব্যথা সেরে যায়।
এছাড়াও যৌন সমস্যা, অনিয়মিত মাসিক সমস্যা, মায়েদের বুকের দুধবৃদ্ধি, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কালোজিরা প্রাকৃতিক অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশের মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদ রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজে লাগিয়ে আসছেন। এসব সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই সুস্থ থাকা যায়। কেননা প্রাকৃতির এই দানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই ভুল হবে না।
লেখক- ডাঃ এমকে রেজা
সিনিয়র মেডিকেল অফিসার
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
গাংনী, মেহেরপুর