এম চোখ ডটকম,গাংনী:
লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে মেরুদন্ড উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয় নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেছিল সুরাইয়া।
পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে সেই সাথে ধরবে সংসারের হাল। মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল
পিতা মাতার। কিন্তু সেই স্বপ্ন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। স্বপ্নটির অকাল মৃত্যু হয়েছে তার স্কুল শিক্ষকের রোষানলে
পড়ে। ক্লাসের এক ছাত্রীর ঠুনকো অভিযোগে সুরাইয়াকে উপর্যুপরি বেত্রাঘাত করেন শিক্ষক হামিদুল ইসলাম। এতে
মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মেরুদÐের শিরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক অর্থের। কিন্তু সুরাইয়ার
দিনমজুর পিতার পক্ষে এতো টাকা যোগাড় করা সম্ভব না হওয়ায় পঙ্গু হতে চলেছে সে। অপরদিকে বিষয়টি ধামাচাপা
দিতে অভিযুক্ত শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্টো চাপ ও হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সুরাইয়ার পরিবার।
সুরাইয়া খাতুন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শালদহ গ্রামের দিনমজুর হাফিজুল ইসলামের মেয়ে ও শালদহ এসএআরবি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত¡াবধানে
চিকিৎসা চলছে সুরাইয়ার। তবে আর্থিক অনটনের কারনে তা ব্যহত হচ্ছে। কোমরের বেল্ট আর বাঁশের লাঠিই তার
চলাচলের একমাত্র ভরসা। সোজা হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা নেই তার। বিছানায় শুয়েই কাটছে তার দুর্বিসহ জিবন। লেখাপড়ার
পর্বটিও চুকে গেছে চারমাস আগে।
সুরাইয়ার অভিযোগ, মাস পাঁচেক আগে বিদ্যালয়ের মীম নামের এক ছাত্রী সুরাইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শিক্ষক
হামিদুলের কাছে। কোন কিছু না শুনেই সহকারি শিক্ষক হামিদুল ইসলাম সুরাইয়াকে বেধড়ক বেত্রঘাত করেন।
মেরুদন্ড আঘাত পেয়ে সুরাইয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর্তনাদ করলেও শোনেননি শিক্ষক হামিদুল। পরে প্রধান
শিক্ষকসহ অন্যান্যরা সুরাইয়া কিছুটা সুস্থ করে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পরদিন মেরুদন্ডের ব্যথা বাড়তে
থাকায় তাকে নেওয়া হয় গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কয়েকদিন চিকিৎসা নেয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার কোন
উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী অথবা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
দিনমজুর পিতা বাড়ির গরু ছাগল বিক্রি করে সুরাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। নিউরো
মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ এম. আহম্মদ আলী সুরাইয়ার আঘাতের স্থানের কয়েকটি পরীক্ষা করান।
পরীক্ষায় উঠে আসে আঘাতের কারণে সুরাইয়ার মেরুদন্ডের প্রধান শিরায় ক্ষত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার চিকিৎসা ব্যয় বহুল
বলে জানতে পারে সুরাইয়ার পরিবার। বিষয়টি জানানো হয় শিক্ষক হামিদুল ইসলামকে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন ও
চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রæতি দিয়ে বিষয়টি চেপে যেতে বলেন। কিন্তু অদ্যাবদি চিকিৎসার কোন
খোঁজখবর নেননি ওই শিক্ষক। বরং এখন তিনি বিভিন্ন নেতা ধরে উল্টো অপবাদ অভিযোগসহ নানা ধরনের হুমকি
দিচ্ছেন।
সুরাইয়ার পিতা হাফিজুল ইসলাম জানান, রাজশাহীতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে হবে বলে চিকিৎসক তাকে
জানিয়েছেন। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগছে। যা কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আত্মীয়
স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন। এমন কোন সম্পদ নেই
যা বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসা করাবেন। তিনি আরো জানান, শিক্ষক যেভাবে মারধর করেছেন তা কোন শাসনের মধ্যে
পড়ে না। এটি অবশ্যই নির্যাতন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরজমিনে বিষয়টি নিয়ে তথ্যনুসন্ধানে গেলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ছাত্রীকে
বেত্রাঘাতের বিষয়টি স্বীকার করে তবে উপর্যুপরি নয়, বাঁশের চিকন কঞ্চি দিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে অকপটে স্বীকার
করেন। সেই সাথে চিকিৎসার কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। কি কারণে এমন আঘাত করা হয়েছে ?
এমন প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে বিদ্যালয় সভাতির সাথে যোগাযোগের কথা বলেন।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিক্ষক হামিদুল বদ মেজাজী এবং সব সময়
শিক্ষার্থীদেরকে নানা কারণে নানা অজুহাতে মারধর করে। লেখাপড়া ঠিকমতো করান না আবার পড়ালেখা বুঝতে না
পারলেও বুঝিয়ে দেন না। কেউ ভয়ে কথা বলে না।
এ বিষয়ে এসএআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল ইসলাম জানান, সুরাইয়াকে মারধর করার ঘটনাটির
সময় তিনি ছিলেন না। তবে শিক্ষক হামিদুল ইসলাম তাকে মারধর করেছেন এটা তিনি শুনেছেন এবং ওই ছাত্রীকে
চিকিৎসার কিছুটা ব্যবস্থা করেছেন বলেও দাবী করেছেন তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনাা পর্যদের সভাপতি রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু জানান, ঘটনাটি
তিনি শুনেছেন। তবে মারধরের পরিমান এতো বেশি বা তার করুন অবস্থা সম্পর্কে জানতেন না। ঘটনাটি জানার পর
বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান এই চেয়ারম্যান।
বিষয়টি অবগত করা হলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনী খাতুন বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত
অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।