গাংনীতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ \
প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করেই চলছে লোকাল রডের কাজ
এম চোখ ডটকম,গাংনী:
প্রকৌশলী ও কার্যসহকারীকে বিশেষ ম্যানেজ করে লোকাল রড দিয়ে চলছে গাংনী উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের নির্মান কাজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ রডকে উন্নত রড দাবি করলেও এর স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না। অপরদিকে স্থানীয়দের বাধার পরেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। ফলে নি¤œমানের কাজ নিয়ে হতাশায় ডুবে পড়ছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের ফুটবল মাঠে নির্মান হচ্ছে গাংনী উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। গ্যালারি বেজ নির্মানের সময় থেকেই নি¤œমানের রড, পাথর ও বালু নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিদর্শনে গিয়ে রড ও পাথর পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। এমপির নির্দেশনা আংশিক মেনে তারা পাথর ব্যবহার না করলেও রড ব্যবহার করে যাচ্ছে কৌশলে।
জানা গেছে, সাহারবাটি ফুটবল মাঠের উত্তর দিকে নির্মান হচ্ছে মিনি স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়ন ও গ্যালারী। এ নির্মানে বজ থেকে শুরু করে পিলার তোলা পর্যন্ত যে রড ব্যবহার করা হয় তা নি¤œমানের বলে অভিযোগ উঠে। ঢাকার স্থানীয় বাজারের রড দিয়ে কিভাবে এত গুরুত্বপুর্ণ নির্মান কাজ হবে তা নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে সমালোচনা শুরু হয়। নির্মান কাজের আশেপাশের লোকজন বারবার নিষেধ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন তা উপেক্ষা করে। এক পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেন।
এ প্রসঙ্গে এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, নি¤œমানের পাথর, রড আর বালু পড়ে আছে। যা দিয়ে ঢালাই করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। নি¤œমানের উপকরণ সরিয়ে নতুন করে ভাল মানের উপকরণ এনে ঢালাই দিতে বলা হয়েছে। অথচ তারা রড পরিবর্তন না করে শুধু পাথর পরিবর্তন করে ঢালাই দিয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন তিনি।
এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে নির্মান কাজ পরিদর্শন করেন সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ও পরিষদের কয়েকজন সদস্য। পরিদর্শন করে তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, এই স্টেডিয়াম এলাকার মানুষের যেমনি আশা পুরণ হচ্ছে তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারের সুনাম হচ্ছে। কিন্তু যে রড দিয়ে কাজ হচ্ছে তা নি¤œমান বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই সরকারের সুনাম অর্জন হওয়ার কাজ যদি এভাবে করা হয় তাহলে তো বদনাম হবে। এলাকার মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কোনভাবেই নি¤œমানের কাজ কাম্য নয়। দরপত্রে উল্লেখিত উপকরণ যথাযথ নিয়মে প্রদান করে নির্মান কাজ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তাব্যক্তিদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজার নুর ইসলাম জানান, এখানে যে রড দেওয়া হয়েছে তা ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু অনুমতির বিষয়ে কোন কাগজপত্র তার কাছে নেই বলে দাবি করেন। দরপত্রের কোন কপিও দেখাতে ব্যর্থ হন তিনি। পক্ষান্তরে কাজ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কার্যসহাকারী আলমগীর হোসেনকেও সেখানে পাওয়া যায়নি। ফলে অভিভাবকহীন ভাবেই এগিয়ে চলছে এ কাজটি।
এদিকে ঢালাই কাজে ব্যবহৃত পাথর এক ট্রাক এলাকার মানুষের বাধার মুখে ব্যবহার করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নি¤œমান স্বীকার করে তারা এ পাথর বাতিল করেছে। অথচ কাজের পাশেই রয়েছে পাথরের স্তুুপ। বাতিল হওয়া পাথরের সাথেই রাখা হচ্ছে নতুন পাথর। ভাল পাথরের সাথে নি¤œমানের পাথর মিশিয়ে যেকোন সময় ঢালাই করা হবে বলে আশাংকা করছেন এলাকার মানুষ।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, এতবড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে অথচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোন প্রকৌশলী আজ পর্যন্ত কাজ দেখতে আসেননি। তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হচ্ছে না এলাকার মানুষের। কাজের পাশে মাঝে মাঝে আসেন কার্যসহকারী আলমগীর হোসেন। নি¤œমানের কাজ হলেও আলগমীর হোসেন মুখ বন্ধ করে তা মেনে নেন। আলমগীর হোসেন ও প্রকৌশলীদের বিশেষভাবে ম্যানেজ করেই এ কাজ চলছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার মানুষ।
এদিকে এমপির নির্দেশনা আর এলাকার মানুষের বাধার মুখে গেল সপ্তাহে গ্রেডের নতুন রড নিয়ে আসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ রডের সাথে পুরাতন সেই লোকাল রড মিশিয়ে পূর্ব দিকের গ্যালারির বেজ তৈরী শুরু হয়। শুক্রবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন কাজ বন্ধ করে দেয়। অথচ বিকেলে আবারও ঢালাই শুরু হয়। কোন অদৃশ্য ইশারায় কাজ শুরু হয়েছে তা নিয়ে এলাকায় চলছে নানা সামালোচনা।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যান কার্যসহকারী আলমগীর হোসেন।
প্রসঙ্গত, গাংনীর সাহারবাটি ফুলবল মাঠে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মান হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় মোট পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যায়ে এ নির্মাণ কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি জয়েন্ট ভেন্সার (জেভি)। যা বাস্তবায়নে রয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।