ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না মেহেরপুর পাসপোর্ট অফিসে,
ভোগান্তির অভিযোগে ক্ষুব্ধ সেবা প্রত্যাশীরা
এম চোখ ডটকম, মেহেরপুর :
হয়রানি ও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না—এমন অভিযোগ উঠেছে মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন ঘুরেও সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। টাকা দিলেই কাজ, না দিলে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া,এমন চিত্রই নিত্যদিনের বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, পাসপোর্ট আবেদনের সময় ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণ ও সামান্য ভুল সংশোধনের জন্যও ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে অফিসে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে সরাসরি টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে।
গাংনী উপজেলার চর গোয়াল গ্রামের বাসিন্দা নুর হোসেন জানান, প্রায় ১০ দিন আগে তিনি পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। আবেদনের সময় ভুলবশত ভোটার আইডি কার্ড ও জন্মনিবন্ধনের নম্বর গুলিয়ে ফেলেন তিনি। পরে বিষয়টি সংশোধনের জন্য একাধিকবার পাসপোর্ট অফিসে গেলেও তার কাজ করা হয়নি। একপর্যায়ে অফিসে দায়িত্বরত আনসার সদস্য সাকিব তার কাছ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বারবার ঘুরানো হয়। পরে ভুক্তভোগীর জোরালো প্রতিবাদ ও তোপের মুখে কোনো টাকা না নিয়েই সংশোধনের কাজ সম্পন্ন করতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একই অভিযোগ করেন মেহেরপুর সদর উপজেলার শিবপুর গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী হিমেল। তিনি জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন তিনি। আবেদনে কোনো ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়নি। বারবার অফিসে গিয়ে শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হওয়ায় দ্রুত ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার অনুরোধ জানালে আনসার সদস্য সাকিব তার কাছে ১ হাজার ১০০ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে পাসপোর্ট হবে না বলে হুমকি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, শুধু এই দু’টি নয়-প্রায় প্রতিদিনই নানা অজুহাতে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। যারা টাকা দিচ্ছেন, তাদের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। আর টাকা দিতে না পারলেই শুরু হচ্ছে ভোগান্তি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আনসার সদস্য সাকিব প্রথমে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বলে উপস্থিত সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. সরবেশ আলী বলেন, সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সেবা প্রত্যাশীরা আনসার সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে এলে পুরো ঘটনার খোলাসা হয়। তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।