মজনুর রহমান আকাশ:
ঈদ উপলক্ষে মেহেরপুর চোখের বিশেষ আয়োজন বাঁশ রম্যকথা।
“কেউ কিন্তু বাঁশ দেবেন না”
বাঁশ একটি অত্যন্ত নিরীহ প্রজাতির ঘাস গোত্রের উদ্ভিদ। ঘাসের প্রজাতি হলেও উচ্চতায় অনেক উদ্ভিদকে বাঁশ দিতে কার্পণ্য করে না। মানুষের জীবনে বাঁশের বহুবিধ ব্যবহার লক্ষণীয়। দোলনা তৈরিকরণ থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত বাঁশ লাগে। বলা যেতে পারে, আমাদের জীবন কোনোভাবেই বাঁশমুক্ত নয়। অন্য সব বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বাঁশের ব্যবহার কৌশলেই বাদ দিতে চেষ্টা করছি, দয়া করে আমাকে চন্দ্রবিন্দু সহকারে কেউ বাঁশ দেবেন না।
আমাদের গণিতে ও সাহিত্যে বাঁশের অনেক ব্যবহার আছে। বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই? এক সময় যতীন্দ্রমোহন বাগচীর এই কবিতাটি লেখাপড়া জানা বাঙালির মুখে মুখে ফিরত। ছোটবেলায় তেলমাখা বাঁশ বেয়ে বানরের উঠে যাওয়া ও নেমে আসার অঙ্কতো অনেককেই করতে হয়েছে। কিন্তু তেলমাখা বাঁশে একটি বানর কেন উঠতে যাবে? সে রহস্য আজ পর্যন্ত কেউ উন্মোচিত করতে পারেনি। অঙ্কটা ছাত্রজীবনে অনেকের জন্য বাঁশ ছিল কিনা আমার জানা নেই, তবে তা আমার জন্য এটা বিশেষ প্রকারের বাঁশ ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না! বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠে যাওয়া ও নেমে আস অংকের জন্য মাঝে মাঝে বাঁশের কঞ্চিও ব্যবহৃত হতো!
বাঁশের দৃশ্যমান ব্যবহারের বাইরে অদৃশ্য বাঁশের ব্যবহারও কিন্তু কম নয়। প্রতিনিয়ত দেখা যায় কারো বাঁশ যাচ্ছে, কেউ বাঁশ খাচ্ছে আর কেউ বাঁশ দিচ্ছে। কোন ঘটনা কারো জন্য বাঁশ হয়ে আসছে। অমুক বাঁশ খেয়েছে, তমুক বাঁশ দিয়েছে, অমুক সেধে বাঁশ নিয়েছে এমন অনেক কথা আমরা শুনে থাকি। আমাদের দেশে নারী-পুরুষ সবাই বাঁশের ব্যবহার অনুশীলনে পটু।এ ছাড়াও বাঁশের আরো একগাদা গুণ রয়েছে।
আসুন একটু দেখে নিই বাঁশ কত প্রকার ও কি কি। বাংলাদেশে প্রায় ৩৩ প্রজাতির বাঁশ আছে এর মধ্যে নিন্মে কয়েকটির নাম তুলে ধরা হলো। তল্লা বাঁশ, মুলি বাঁশ, বরাক বাঁশ, মুরাল বাঁশ, নলজাই বাঁশ, শিল বরাক বাঁশ, পামা বাঁশ, বাইজ্জা বাঁশ, স্বর্ণা বাঁশ, ঘটি বাঁশ ও ভুদুম বাঁশ ইত্যাদি।তবে আইক্কা আলা বাঁশের ব্যবহার থাকলেও পুস্তকে নেই।
বাংলাদেশে প্রায় সব এলাকায় বাঁশের চাষ ও ব্যাপকভাবে বাঁশের ব্যবহার হয়ে থাকে। বাড়িঘর নির্মাণ, কৃষি ও মাছ ধরার উপকরণ তৈরি, রিকশা, গরুর গাড়ি ও নৌকার বিভিন্ন উপকরণ তৈরি, খাল-নালা পারাপারের সাঁকো নির্মাণ, দৈনন্দিন ব্যবহারের বিভিন্ন আসবাবপত্র এবং সৌখিন দ্রবাদি তৈরির কাজে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে বাঁশের ব্যবহার দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রয়েছে। বাঁশের কঁচি কান্ড মানে কোড়া সুস্বাদু সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে।
আসুন আমরা বাঁশ চাষ করি । সেই সাথে কারো বাঁশ দেয়া থেকে বিরত থাকি।