সরেজমিনে গাংনীর বেতবাড়িয়া।। গায়ের জোরে গরীবের জমি দখল
এম চোখ ডট , গাংনী :
ক্রয়কৃত জমির দখল পেতে প্রশাসনের দারে দারে ঘুরেও কোন কুল কিনারা করতে পারছেন না গাংনীর বেতবাড়িয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম। ক্রয়কৃত সম্পত্তি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রভাবশালীরা নিজের বলে দাবী করে দখল করেছেন। তবে জমির প্রকৃত মালিক নুর মোহাম্মদ কালু বলেছেন- ওই প্রভাবশালী অবৈধভাবে জমির দখল নিয়েছেন।
জানা গেছে, বেতবাড়িয়া মৌজার ৭৮৯৪ দাগে ৭ শতাংশ ও ৭৮৯৮ দাগে ৬৩ শতাংশ জমি রয়েছে। আরএস রেকর্ডে দুই দাগের ৩৫ শতাংশ জমি নুর মোহাম্মদের মা আঞ্জুমান আরা খাতুনের ও বাকি ৩৫ শতাংশ রাবেয়া খাতুনের ৩ ছেলে ইলিয়াস, ইয়াহিয়া ও গোলাম জাকারিয়ার নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। নুর মোহাম্মদ তার মায়ের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত হয়ে গ্রামের ৭ জনের কাছে ৩৫.৫ শতাংশ বিক্রি করেন। এ ছাড়াও ওই দুই দাগের আরো ৮ শতাংশ জমি মনিরুল ও তার জামাতা উজ্জ্বলের নিকট বিক্রি করেন। পরে মনিরুল ও উজ্জ্বল দলিলমূলে জমি খারিজ করেন। এর পরে ওই জমি দখল বুঝে নিয়ে ঘর করার জন্য ইট নিয়ে আসেস তারা।
এদিকে গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে আরিফুল ইসলাম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম ওই দুই দাগের ৩৫ শতাংশ জমি রাবেয়া খাতুনের তিন ছেলে ইলিয়াস, ইয়াহিয়া ও গোলাম জাকারিয়ার কাছ থেকে বায়না করেছেন বলে দাবি করেন। এই বায়নানামার কথা বলে মনিরুল ইসলাম ও তার জামাতা উজ্জ্বলের ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখল করে তারের বেড়া দেয়। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে শক্তিতে দুর্বল মনিরুল ইসলাম প্রতিবাদ করতে পারেনি। ফলে অসহায়ের মতো দখল দেখা ছাড়া তার হাতে কোন উপায় ছিল না। গ্রামের অনেকে বিষয়টি দুর্বলের উপর সবলের জুলুম হিসেবে মনে করলের প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। উপায় না পেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী অসহায় মনিরুল।
জোরপূর্বক দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম বলেন, রাবেয়া খাতুনের তিন ছেলের কাছ থেকে জমি কেনার জন্য বায়না করা হয়েছে এবং সেমত দখল করা হয়েছে। রেকর্ডপত্র দেখে জমি কেনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাইদুল ইসলামের দাবির বিষয়ে জমির মালিক নুর মোহাম্মদ কালু জানান, সিএস ও এসএ রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত ৩২১৩,৩২১৪ ও ৩২১৫ দাগ যা আরএস রেকর্ডের দাগ নম্বর ৭৮৯৮ এবং সিএস ও এসএ রেকর্ডের ৩২১৬ দাগ যা আর এস রেকর্ডের ৭৮৯৪ নং দাগ পরিবর্তীত হয়। এতে জমির পরিমান হয় ৭০ শতাংশ। এ জমি তার মা আঞ্জুমান আরার নামে ১৯৫৬ সালে বণ্টন নামা করা হয়। আর রাবেয়া খাতুনের নামে বণ্টন নামায় দেয়া হয় সিএস ও এসএ রেকর্ডের ৩১৯১, ৩১৯২, ৩১৯৪ ও ৩১৭৩ দাগের মোট ৬৯ শতক জমি। সেই থেকেই উভয়পক্ষ জমি ভোগ দখল ছাড়াও বেচা বিক্রি করে। খারিজ- খাজনা সবই প্রদান করা হয় বছর বছর।
তিনি আরো জানান, আর এস রেকর্ডের সময় ইলিয়াস, ইয়াহিয়া ও গোলাম জাকারিয়ার নামে ৭৮৯৮ ও ৭৮৯৪ নম্বর দাগের জমি রেকর্ডভুক্ত হয় ৩৫ শতাংশ জমি। এ জমি নিজেদের বলে দাবি করে অন্যের কাছে বিক্রি করার জন্য বায়না নামা করেন। এ ব্যাপারে মেহেরপুর আদালতে একটি মামলা করা হলে আদালত স্থগিতাদেশ (১৪৫ ধারা) প্রদান করেন। তার পরও যারা বায়না নামা করেছেন তারা অবৈধভাবে দখলে গেছেন।
দখল না পাওয়া মনিরুল ও উজ্জ্বল জানান, তারা নিজের টাকায় জমি কিনেছেন। কোন সমস্যা থাকলে নুর মোহাম্মদ ও রাবেয়া খাতুনের ছেলেরা বসে ঠিক করতে পারেন। কিন্তু তা না করে স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আশীর্বাদে বায়না নামাকারী আরিফুল ইসলাম ও তার লোকজন জবর দখল নিয়েছেন এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও বিরোধপুর্ণ জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করছেন।