মীর শামীম/আব্দুল আলিম, এম চোখ ডট কম, গাংনী:
স্ত্রীর পরকিয়ার জেরে স্বামী আসাদুজ্জামানকে (৩৫) হত্যা করে হৃদরোগে মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগে আসাদুজ্জামানের পরিবারের মামলার প্রেক্ষিতে মৃত্যুর দুই বছর পরে কবর থেকে তোলা হলো মরদেহ। সোমবার দুপুরে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চাঁন্দামারী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করে ফরেনসিকে পাঠায় পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদাত হোসেন ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের একটি দল মরদেহ উত্তোলন করে।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান বিয়ে করে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামে। ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবনের তাদের তিন সন্তান রয়েছে। ওষুধ কোম্পানীতে চাকুরির সুবাদে চুয়াডাঙ্গা শহরে ফ্লট কিনে সেখানে বসবাস করতেন। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ রাতে সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বলে খবর পায় পরিবার। পরিবারের লোকজন গিয়ে তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসে। স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করলেও পরবর্তীতে মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। তাকে হত্যা করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন সন্দেহ ঘনিভূত থাকে পরিবারের কাছে। বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে অভিযোগের এক পর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন আসাদুজ্জামানের ভাই লিটন হোসেন। মামলায় আসাদুজ্জামানের স্ত্রী মোনালিসা লোপা খাতুন ও তার সন্দেহভাজন পরকিয়া প্রেমিক হুমায়ন কবিরকে আসামি করা হয়। পুলিশ তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।
নিহতের ছোট ভাই মাসুম বিল্লাহ জানান, আসাদুজ্জামানের স্ত্রী মোনালিসা লোপা চুয়াডাঙ্গার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। চুয়াডাঙ্গা বসবাসকালীন সময়ে গোপনে সে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নরসিংদি জেলার হুমায়ন নামের এক ব্যক্তি দুবাই থাকা অবস্থায় মোবাইলে লোপার সাথে পরকিয়া প্রেম করতো। হুমায়নের কাছ থেকে অনেক টাকা নেয় লোপা। সম্পর্কের এক পর্যায়ে দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু লোপা অন্য আর এক ব্যক্তির সাথে আরও একটি পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এতে সে হুমায়নে এড়িয়ে চলতে থাকে। বিষয়টি টের পেয়ে হুমায়ন আসাদুজ্জামানের পরিবারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করে। পরকিয়া প্রেম আর হুমায়নের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি হুমায়ন জানায় আসাদুজ্জামানের ভাইকে। খিচুড়ির মধ্যে বিষ মিশিয়ে আসাদুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছে বলে হুমায়ন জানায় তাদের। পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।
এদিকে অভিযোগের মধ্যেই হুমায়নের সাথে লোপার আবারও সুসম্পর্ক হয় আসাদুজ্জামানের মৃত্যুর ৫ মাসের মাথায় লোপার সাথে বিয়ে হয় হুমায়নের। এতে হত্যাকাণ্ডের সাথে হুমায়নের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ হয় আসাদু্জ্জামানের পরিবারের। পরবর্তীতে লোপা, হুমায়ন ও লোপার অপর পরকিয়া প্রেমিককে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা আদালতে মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই হাসানুজ্জামান লিটন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতি সন্দেহে হুমায়নকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। তবে লোপাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিন আলী (পিপিএম) জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। যেহেতু দুই বছর আগে তার মৃত্যু তাই মরদেহের অনেক অংশ পাওয়া যাবে না। হাড়গোড় যা কিছু পাওয়া গেছে তা পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।