উপজেলা নির্বাচনে থাকছে না নৌকা ।। গাংনী আ.লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে স্বস্থি
এম চোখ ডট কম, গাংনী:
২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে গাংনী উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছিলেন প্রতিদ্বন্দী পরাজিত প্রার্থী গাংনী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম। মজিরুল ইসলামের অভিযোগ ছিল, শুধুমাত্র নৌকা প্রতীকের সুবিধা নিয়ে তার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হল। গেল উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের এ অভিযোগের বিষয়টি আলোচনায় এনে এবার প্রতীক না থাকার বিষয়টিতে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকে।
উপজেলায় প্রতীক না দেওয়ার বিষয়ে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুকুল বলেন, প্রতীক না থাকলেই দলের জন্য ভাল। এতে ফেয়ার নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয় লোক সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। যার জনপ্রিয়তা যত বেশি তিনিই বিজয়ী হবেন।
আলাপচারিতায় আওয়ামী লীগের আরও কয়েক নেতা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে প্রতীক পাওয়ার জন্য বড় ধরনের টাকা লেনদেনের গুঞ্জন রয়েছে। প্রতীক পেতে হলে লাগে টাকা আর প্রতীক পেলেই পাশ। এমন গুঞ্জন রয়েছে এলাকাজুড়ো। যা একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা। এর মাধ্যমে যোগ্য মানুষ যেমন রাজনীতি থেকে ছিটকে যাচ্ছেন অন্যদিকে প্রতীকের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ গ্রাম পর্যায়ে বেশ দানা বেঁধেছে। যা দলের জন্য মোটেও সুখকর নয় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী অনেক নেতাকর্মী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে গেল ৭ জানুয়ারী। এর পর থেকেই মূলত সারাদেশের মত গাংনী উপজেলাতেও উপজেলা নির্বাচনী আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে প্রতীক থাকা না থাকার বিষয়টি। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং পরবর্তীতে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী চিত্র আলোচনায় ছিলে বেশ জোরালোভাবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ সচেতন জনগণের একটি অংশ প্রতীক বাদ দেওয়ার পক্ষে মতামত প্রকাশ করছিলেন জোরালোভাবে। এক পর্যায়ে গেল সোমবার আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা শেষে প্রতীক না দেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াইদুল কাদের। আর এ খবরে স্বস্থি ফিরে আসে যেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূল থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব নেতাকর্মী স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক না দেওয়ার বিরুদ্ধে। এসকল নির্বাচনে প্রতীক দেওয়ায় দলের বিরোধ তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কে সরকারে থাকবে তা নির্ধারণ হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারের ক্ষমতার বদল হয় না। তাই এসকল নির্বাচনে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতীকের বিষয়টি খুব বেশি বিবেচ্য নয়।
ইউনিয়ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রতীক থাকলে বেশ অস্বস্থিতে পড়তে হয় নেতাকর্মীদের। কারণ স্থানীয়ভাবে চলাফেলার সম্পর্ক, আত্মীয়তা, এলাকার মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। প্রতীক থাকার কারণে অযোগ্যদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে যোগ্য নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে গিয়ে চরম বিরোধের আগুনে জ¦লতে হচ্ছে নেতাকর্মীদের।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীকের বিষয়ে কী বলছে আইন :
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার (উপজেলা) (সংশোধন) বিল-২০১৫ এ বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুটি ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ ও সংরক্ষিত) পদের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। আইনটি পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হয় উপজেলায়। তারপর থেকে সকল স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে।
এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারী) সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়া হলেও তা আইনের ব্যত্যয় হবে না। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়; দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না।
আইন থাকার পরও এটা সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইনটা যেভাবে করা আছে, তাতে দলীয় প্রতীকেও নির্বাচন হতে পারে, দলীয় প্রতীক ছাড়াও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘‘কোনো দল যদি কাউকে মনোনয়ন দিয়ে প্রতীক দেয়, সেখানে নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে। এছাড়া আরও বিকল্প আছে। কেউ কেউ স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারে। আমি আইনটি পড়েছি, আইনটি ঠিক আছে,”।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি মনে করে তারা দলীয় মনোনয়ন দেবে, সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু দল যদি মনে করে মনোন দেবে না বা কোথাও কোথাও দেবে, সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইন সংশোধনের কোনো দরকার পড়বে না।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে দলের যে কেউ অনেকটা স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতো ভোট করতে পারবেন। দলের নেতাকর্মীরাও যার যার পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে পারবেন।
আরও পড়ুন : গাংনীর দুই ইউপির তিন ওয়ার্ডের উপ নির্বাচনের তফশীল উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দিলেও আইনের ব্যত্যয় হবে না : তাজুল ইসলাম