মীর শামীম :
জীবনঘাতী নিকোটিন সমৃদ্ধ তামাকের কালো ছায়া গ্রাস করছে শস্য ভান্ডার গাংনীর সুজলা, সুফলা ফসলের ক্ষেত।
তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাক চাষ। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর কেীশলগত প্রচারণা ও প্রণোদনার কারণে চাষিরা ঝুঁকছেনতামাক চষে। সবুজের আড়ালে প্রতিটি পাতায় পাতায় নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে একেকটি তামাকের চারা। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, জমির উর্বরতা ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা।
এদিকে চোখের সামনে তামাক চাষ হলেও তা রোধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ এমনি অভিযোগ সাধারণ চষিদের। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে তামাক চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকেরা। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে তামাকের চারা। আবার কোথাও কোথাও তামাক পাতা স্যাঁকার জন্য তোলা হচ্ছে চুল্লী।এসব চুল্লীতে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ও ঝুটকাপড় পোড়ানো হয়। ফলে বিকট গন্ধে বাতাস দুষিত হয়। গেল বছরের তুলনায় এবার বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বলেও
জানিয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর লোকজন বিভিন্ন ধরণের প্রনোদনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে সার কীটনাশক পলিথিন ও নগদ টাকা। চাষিরা তামাক বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করে থাকেন। মোটা অংকের টাকারলোভে চাষিরা তামাক কোম্পানীর কথায় তামাক চাষ করছেন।
কুঞ্জনগরের তামাক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ৬ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তামাক চাষে লাভ বেশি। এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ৭/৮ হাজার টাকা এবং তামাক ভালো হলে ৫-৬ মণ তামাক পাওয়া যায়। সব বাদ দিয়ে প্রচুর টাকা লাভ হয়। তামাক চাষে যাযা লাগে সবই কোম্পানীর লোকজন দেয়। ওনাদের। উৎপাদিত তামাক বাজার মূল্য ধরে যা দাম হবে ওনাদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে তারা তামাক নিয়ে যাবে।এধরণের একই কথা জানান বেশকজন চাষি। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে না। মেহেরপুর জেলা ক্যাবের সভাপতি রফিকুল আলম জানান, তামাক চাষ শুধু ক্ষতিকরই না
অত্যন্ত অলাভ জনক। তামাক চাষের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ হিসেবে করলেই তার প্রমান মিলে। তাছাড়া তামাকের উচ্ছিষ্ট অংশ হৃদপিন্ডে ঢুকে ক্যান্সার সহ মরণ ব্যাধি হতে পারে। তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ এমকে রেজা জানান, তামাক নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যারা তামাকের পরিচর্যা করে তারাও নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। ধুমপায়ীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে হাপানি ফুসফুসে প্রদাহ ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রন্ত হন তারা। গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, এ অঞ্চলে এবার
এক হাজার ৫৯৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস নানা ভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। আমরা তামাকের বদলে আরো অন্য ফসল চাষ করার জন্য তাদেরকে বলছি। তবুও কিছু তামাক কোম্পানি কৃষকদের
প্রভাবিত করছে। তবে অনেকেই তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আগামীতে তামাকের আবাদ অনেকটা কমে যাবে বলেও জানান তিনি।