গাংনীতে হার্ট এর্টাকের রোগীকে পেটে ব্যাথার চিকিৎসা ॥ মৃত্যু………
এম চোখ ডট কম, গাংনী:
মেহেরপুরে গাংনীতে ভুল চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যু অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তার আগে কুষ্টিয়া মেডিকেলে রেফার করে দায় এড়িয়েছে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক। এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। রোগীর হার্ট এর্টাক হলেও তার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে পেট ব্যাথার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাংনী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড পূর্বমালসাদহ গ্রামের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন অসুস্থ হলে তাকে নেওয়া হয় গাংনীতে ডাক্তার তাসনিক জাহানের কাছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ইসিজিসহ নানা পরীক্ষা করান তিনি। রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তিনি রোগীর পেটের পিড়ার ওষুধ প্রেসক্রিপশন করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আগামি ২১ দিন পর আবারও চেম্বারে ফলোআপের জন্য আসার নির্দেশনা দেন ওই চিকিৎসক। এদিকে ওই সক্রিপশনের ওষুধ সেবনে রোগীর শারীরিক অবস্থা ভাল হওয়া তো দূরের কথা; অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে গেল ১৬ জুন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় মনোয়ারা খাতুনকে। সেখানেও রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেটের পিড়ার ওষুধ দেওয়া হয়। গাংনী হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকও তাকে পেটে পিড়ার ওষুধ দিয়ে রোগীর পরিবারকে শান্তানা দেন যে, ওষুধ খেলে ভাল হয়ে যাবে। তবে ভাল হয়নি। রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে রোগীর শারীরিক খুব খারাপ পর্যায়ে গেলে পরিবারের লোকজন পড়েন চরম দুশ্চিন্তায়। শেষ পর্যন্ত রোগী নেওয়া হয় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
জানা গেছে, গাংনীতে সম্পন্ন করা রোগীর বিভিন্ন রিপোর্ট পর্যালোচনা করে কুষ্টিয়া মেডিকেলের চিকিৎসকরা বিষ্ময় প্রকাশ করেন। মনোয়ারা খাতুনের হার্ট এর্টাক বলে চিহ্নিত করেন তারা। সেখানে খুব দ্রুত তারা হৃদরোগের চিকিৎসা শুরু হয়। কুষ্টিয়া মেডিকেলের জরুরী বিভাগে সেদিন দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ সুতপা রায়। যিনি মনোয়ারা খাতুনকে হার্ট এর্টাকের রোগী হিসেবে ভর্তি করেছিলেন।
এ বিষয়ে ডাঃ সুতপা রায় বলেন, আমি যখন রোগী পেয়েছি তখন তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। গাংনী থেকে আনা ইসিজি রিপোর্ট দেখে আমি তাকে হার্ট এর্ট্াকের রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে বেডে পাঠায়। মূলত ওই ইসিজি রিপোর্ট দেখে গাংনীর ডাক্তারদের বোঝা উচিৎ ছিল রোগীর হার্ট এর্টাক হয়েছে। বিষয়টি তারা কেন আমলে নেয়নি তা বোধগম্য নয়। রোগীর অবস্থা এতটাই বাজে ছিল যে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি সময় হাতে ছিল না।
এদিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গেল শুক্রবার মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েন মনোয়ারা খাতুন। গাংনীতে ভুল চিকিৎসার কারনে রোগী মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পরিবারের লোকজন।
চিকিৎসকরা বলেন, মূলত মনোয়ারা খাতুন Acute Myocardial Information (AMI) আক্রান্ত ছিলেন। যেটাকে মানুষ হার্ট এটাক বলে জানেন।
বিষয়টি নজরে আনলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সুপ্রভা রাণী বলেন, বিষয়টি আমার অজানা। তবে এ বিষয়ে কোন চিকিৎসক সেদিন হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন তার সঙ্গে কথা বলবো। এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে নজর রাখবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নতুন নতুন চিকিৎসক যারা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আর অভিজ্ঞতা অর্জন না করেই গুরু দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রায়ই এ ধরনের বিপত্তিকর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তাদের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে সচেতন মহলের দাবি, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং গাংনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নবাগত ডাক্তারদেরকে হার্টের ইসিজির উপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কেননা এখন হার্টের রোগীর সংখ্যা আশংকাজনহারে বেড়েছে।