329
এম চোখ ডটকম,গাংনী:
গাংনী উপজেলায় নির্মান হচ্ছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। এ স্টেডিয়ামটি নির্মানে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে বেজ ঢালাই করা হচ্ছে। নির্মানকাজে মানহীন রড, ধুলা মেশানো বালু ও আর মরা পাথ দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে ঢালাই করার জন্য বালু, পাথর আর সিমেন্টের নির্দিষ্ট অনুপাত মানা হচ্ছে না। ফলে ৫ কোটি টাকার এ নির্মান কাজ নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে এলাকার মানুষের মাঝে। জানা গেছে, সম্প্রতি নির্মানকাজ পরিদর্শন করে নানা অনিয়ম তুলে ধরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীদেরকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান। সিডিউলে উল্লেখিত নির্মান সামগ্রীর যথাযথ মান নিশ্চিত করে তিনি নির্মান কাজ করার নির্দেশ দেন। এতে গেল এক সপ্তাহ কাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে গ্যালারী ও প্যাভিলয়েনে বেজ ঢালাই শুরু হয়। বন্ধ ও কাজ চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দাবি বরেন সমঝোতার মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। জানাগেছে, উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মানের প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় মোট পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যায়ে গাংনী উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি জয়েন্ট ভেন্সার (জেভি)। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর প্রথম থেকেই নিম্নমানের রড পাথর ও বালু ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে যান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তিনি কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পান। এসময় তিনি কাজ বন্ধ রাখাসহ নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। কয়েকদিন পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবারও কাজ শুরু করেন ওই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। সাদা পাথরের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কালো পাথর যা অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও যে সমস্ত সাদা পাথর স্তুপ রাখা হয়েছে তা ব্যবহারে অযোগ্য। ২.৫ এফএম বালু ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও লোকাল বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সাথে মিশ্রনটি সঠিক পরিমাপের নয়। এদিকে স্থানীয় লোকজন একাধিকবার অভিযোগ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাকে কর্ণপাত না করে বেশ জোরালো ভাবেই নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীভাবে সংগৃহিত বালুর সাথে সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। খোয়া, বালু ও সিমেন্টের আনুপাথিক হার ঠিক করার জন্য ফান্না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বাশের ঝুড়ি দিয়ে মাপ দেওয়া হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট অনুপাত অগ্রাহ্য হচ্ছে। পাথর বালু ও সিমেন্টের পরিমাপ আনুপাতিকহারে সঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া রডের ব্যবহার হচ্ছে নিম্ন মানের। এর পরিমাপও সঠিক নয়। প্রয়োজনীয় পানি দিয়ে বালু ওয়াশ করার নির্দেশনা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ধুলা মিশ্রিত বালু ব্যবহার হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে নির্মান কাজ করা হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোটি টাকা সাশ্রয় করবে। অপরদিকে নিম্নমানের স্টেডিয়াম নিয়ে জীবন ঝুঁকিতে পড়ে মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শক ও খেলোয়াড়রা। এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অনেকে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কয়েকজন জানান, কাজ শুরুর প্রথম দিকে যে রড বালু ও পাথর আনা হয়েছিল তা নিম্নমানের হওয়ায় এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন নির্মাণকাজ দেখতে আসেন এবং অনিয়মের কথা বলে মালামাল সরিয়ে নেয়ার আদেশ দেন। এর মধ্যে ওই পাথর বাদ দিয়ে কালোপাথর দিয়ে কাজ শুরু করতে বলায় নতুন করে কালো পাথর আনা হয়েছে কিন্তু কালো পাথর ব্যবহারের নির্দেশনা নেই। তবে ব্যবহারের অযোগ্য মৃত পাথরগুলো সরানো হয়নি। তাছাড়াও যে রডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তা এমপি সাহের অনুমতি নিয়ে বিশেষভাবে কাজ চলছে। পরবর্তীতে নতুন করে রড আনা হবে। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কনসালটেন্ট সাদ্দাম হোসেন বালু ওয়াশ করা হয়েছে বলে দাবী করে জানান, নিয়মানুযায়ি কাজ করা হচ্ছে তবে নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নেয়া হবে। তবে বালু পাথর ও সিমেন্টের আনুপাতিক হার সঠিক না হওয়ার ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনী খাতুন জানান, স্টেডিয়াম নির্মানে কোন দুর্ণীতি সহ্য করা হবে না। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন তিনি। বন্ধ কাজ পুনরায় শুরু করার ব্যাপারে সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের সাথে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরুর কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাথর ও বালু পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানানোর পর কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। তবে যেহেতু রড গেঁথে তার কাজ শুরু করা হয়েছে সেটি পরিবর্তন সহজ নয় এবং পরে উন্নত মানের রড ব্যবহারের শর্ত দেয়া হয়েছে।