গাংনীর আলোচিত জেলা পরিষদ মার্কেট আপাতত উচ্ছেদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে
মেহেরপুরের চোখ ডট কম, গাংনী :
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের দু’পাশে চলমান উচ্ছেদ অভিযান থেকে আপাতত রক্ষা পাচ্ছে গাংনীর জেলা পরিষদ মার্কেট। গাংনী বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দোতলা এই মার্কেট ভবনে প্রায় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদ ঘোষণায় বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) সারা দিন নানা আশংকা আর মালামাল নিয়ে ব্যবসায়ীদের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে রাতে এ সু-সংবাদটি দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম। নিয়মের মধ্যেই মার্কেট অরক্ষিত থাকছে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি সংস্কার ও প্রশস্থকরণ কার্যক্রম শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। জেলা ভিত্তিক মেগা প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া বাইপাস থেকে মেহেরপুর কলেজ মোড় পর্যন্ত এ সংস্কার কাজ হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কাটা হচ্ছে সড়কে পাশের গাছ গাছালী। সড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবমুক্ত করার অভিযানও চলমান। বুধবার (১ মার্চ) সকালে মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে উচ্ছেদ শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাংনী শহরের হাসপাতাল বাজার পর্যন্ত পৌছায়। এর আগে রাস্তা মাপজোক করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সীমানা লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যে লাল দাগের মধ্যে পড়েছে গাংনীর জেলা পরিষদ মার্কেট। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জেলা পরিষদ মার্কেটের দোকানীদেরকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে উচ্ছেদ শুরু হলে বেশিরভাগ দোকান ও বাসা মালিক তাদের স্থাপনা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে থাকেন। বৃস্পতিবার বিকেলে উচ্ছেদ অভিযান দল যখন গাংনী হাসপাতাল বাজারে কাজ শুরু করে তখন জেলা পরিষদ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মালামাল সরাতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। রাত ৯টা পর্যন্ত অনেকে মালামাল ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেন। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই সিদ্ধান্ত ভুল বলে দাবি করে আসছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন :
মেহেরপুরে রাস্তার দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যা হচ্ছে
মেহেরপুর জেলা পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, আরএস রেকর্ড অনুযায়ী গাংনীর জেলা পরিষদের মার্কেটের এই জায়গার মালিক মেহেরপুর জেলা পরিষদ। মালিকানা অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গায় দোতলা মার্কেট ভবন নির্মান করেছিল জেলা পরিষদ। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যদি সড়ক প্রশস্থ করণের জন্য এ জায়গার প্রয়োজন হয় তবে তা নিয়মের মধ্যে অধিগ্রহণ করতে পারে। পুরাতন ম্যাপ থেকে তারা এ ভবনটি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম বলেন, যা কিছু উন্নয়ন তা সবই মানুষের জন্যই। কাজেই বেআইনীভাবে উচ্ছেদ করে সড়ক নির্মান করলে উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলো কষ্টে পড়বে। তাছাড়া জেলা পরিষদের সামনে সড়কের উত্তর-পশ্চিম দিকে রাস্তার জায়গা রয়েছে ১৭০ ফুটের উপরে। এ জায়গা ফেলে রেখে জেলা পরিষদের মার্কেট কেন ভাঙ্গতে হবে ? এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বে থাকা উপ সচিব এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কাগজপত্র নিয়ে কথা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তারা এই ভবনটি উচ্ছেদ করতে পারছে না। তাই তারা নিশ্চিত করেছে জেলা পরিষদের এই মার্কেট ভাঙা হচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজের প্রয়োজনে যদি কোন সময় জায়গা ছাড়তে হয় তবে তা নিয়মের মধ্যেই ছাড়া হবে। কেউ আমাদের বুকের উপর বুলডোজার চালিয়ে দেবে তা মেনে নেওয়া হবে না। মালিকানা অনুযায়ী জেলা পরিষদ থেকে এই জায়গার খাজনা প্রতি বছর পরিশোধ করে আসছে। কাজেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ মনগড়া সিদ্ধান্তে মার্কেট ভাঙতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এ বার্তা পৌঁছুনোর পর স্বস্তি ফিরে আসে জেলা পরিষদের মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মনে। দিশেহারা ব্যবসায়ীরা কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতি।
উচ্ছেদ অভিযান সুত্রে জানা গেছে, গাংনী হাসপাতাল বাজার থেকে গাংনী উত্তরপাড়া পর্যন্ত অনেক স্থাপনা রয়েছে। এগুলো ভেঙ্গে সরিয়ে দিতে দুটি বুলডোজার ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও অন্য দিনের চেয়ে বেশি থাকবে। জনবল বাড়ানো হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। যাতে কোন বিঘ্ন ছাড়াই কাজ সম্পন্ন করা যায়।
অভিযান দলের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মাপজোককৃত সীমানা থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাও ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। মেহেরপুর পুরাতন বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে গাংনী হাসপাতাল বাজার পর্যন্ত কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হয়নি। উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন :
মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, ৩ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের ভুমিকা বিশ্বব্যাপী প্রসংশনীয়