গাংনী হাসপাতালের বড় বাবু আর নার্স আমেনার স্বাক্ষর জালিয়াতি কাণ্ড ফাঁস ! তদন্ত
এম চোখ ডট কম, গাংনী:
হাসপাতালে আধিপত্য বিস্তারে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২২ জনের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে এক নার্সকে বদলি করতে গিয়ে আমেনা খাতুন নামের এক নার্স নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন। তার এই অপকর্মের সাথে জড়িয়ে একইসাথে ফেঁসেছেন হাসপাতালের বড় বাবু অর্থাৎ প্রধান সহকারি আসাদুল ইসলাম লিটন। বিষয়টি এখন হাসপাতাল পাড়ার প্রধান সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাল স্বাক্ষরের এসব বিষয়ে ইতিমধ্যে সরজমিন তদন্ত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গঠিত একটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
অভিযোগে জানা গেছে, গেল জুন মাসের আগে হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজারের শূন্য পদে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নার্স আমেনা খাতুন। হাসপাতালের চারতলায় নার্সদের কক্ষে কম্পিউটরে কাজ করেন সিনিয়র স্টাফ নার্স রাফিজা খাতুন। নানা অজুহাত দেখিয়ে রাফিজা খাতুনকে কম্পিউটর চেয়ার থেকে সরিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব দিয়ে নাজেহাল করতে থাকেন আমেনা খাতুন। এ নিয়ে নার্স পরিবারের অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ থাকলেও তা বাইরে তেমন প্রকাশ হয়নি। জুন মাসে নতুন নার্সিং সুপারভাইজার দায়িত্ব পান। তখন আমেনা খাতুন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নিজেই রাফিজা খাতুনকে অবগত করতে থাকেন।
জানা গেছে, রাফিজা খাতুনকে গাংনী হাসপাতাল থেকে বদলি করার জন্য নার্স আমেনা খাতুন একটি ভূয়া আবেদন তৈরী করেন। নার্সিং অভিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে করা আবেদনে রাফিজার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক শৃংখলা ভঙ্গের নানা অভিযোগ লেখা হয়। এই অভিযোগের আবেদনে স্বাক্ষর দেখানো হয় ১৯ জন নার্স, ২ জন আয়া ও ১ জন সুইপারের। যাদের সবার স্বাক্ষর জালিয়াতি করেন নার্স আমেনা খাতুন।
এদিকে আমেনা নার্সের সাথে জোগসাজসে ওই জাল স্বাক্ষরের আবেদন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে একটি ফরোয়ার্ডিং তৈরী করে দেন প্রধান সহকারি আসাদুল ইসলাম লিটন।
অভিযোগে জানা গেছে, আসাদুল ইসলাম লিটন অফিসিয়াল ফরোয়াডিং করে অভিযোগের কাগজ আমেনার কাছে দিয়ে ডিজি কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে বলেন। কিন্তু আমেনা খাতুন সেখানে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। সম্প্রতি বিরোধ থাকা নার্স রাফিজার সাথে তার সম্পর্ক ভালোর দিকে গড়ায়। এর সুত্র ধরে বিষয়টি নিজেই ফাঁস করেন নার্স আমেনা খাতুন।
জানা গেছে, আমেনা খাতুন জৈষ্ট্যতা লঙ্ঘণ করে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে নার্সিং সুপারভাইজার পদ পাওয়ার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা করেন। তবে নীতিমালা কাভার না করায় তিনি সুপারভাইজার পদে যেতে ব্যর্থ হন। এই সুপারভাইজার হওয়ার বিষয়ে আসাদুল ইসলাম লিটনের সাথে তার সম্পর্কের টানপড়েন শুরু হয়। এর জের ধরেই লিটনকে ফাঁসাতে আমেনা নিজেই স্বাক্ষর জালিয়াতির কাগজপত্র প্রকাশ করে বলে ধারণা করছেন হাসপাতালের অনেকে।
এদিকে বিষয়টি গড়িয়েছে সিভিল সার্জন পর্যন্ত। অধিদপ্তরও বিষয়টি অবগত। স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গঠিত হয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি তদন্ত কমিটি। তদন্ত দল সোমবার (৩১ জুলাই) তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিন গাংনী হাসপাতালে গিয়ে ওই দরখাস্তে উল্লেখিত সকলের স্বাক্ষর পরীক্ষা করেছেন। এই স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে মর্মে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন ২২ জন। তবে তদন্ত প্রতিবেদন সিভিল সার্জনের কাছে দাখিলের আগে কোন কথা বলতে চাননি তদন্তকারীরা।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন : গাংনীতে ফেনসিডিলসহ এক জনকে আটক করেছে র্যাব আগের চেয়ে দামি গাড়ি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা