ঘুষ নিয়ে ফেঁসে গেলেন গাংনী শিক্ষা অফিসের সেই রেজাউল
এম চোখ ডট কম, গাংনী: অসহায় এক শিক্ষক পরিবারের কাছ থেকে ঘূষ নিয়ে ফেঁসে গেলেন গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসের আলোচিত অফিস সহকারি কাম কাম্পিউটর অপারেটর রেজাউল ইসলাম। স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষক সমাজের প্রতিবাদের মুখে সোমবার (০৪ মার্চ) তিনি ঘূষের টাকা ফেরত দিলেও তার অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। অবশ্য ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের পর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা অফিস। জানা গেছে, ভুক্তভোগী এক অসহায় শিক্ষক পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষের মৌখিক চুক্তিতে ২ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন রেজাউল ইসলাম। তবে নির্দিষ্ট সময় কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা বিষয়টি শিক্ষকদের কাছে প্রকাশ করেন। এর জেরে সোমবার দুপুরে স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষক সমাজ রেজাউলের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এসময় তাদের সামনে অপরাধ স্বীকার করে দুই হাজার টাকা ফেরত দেয় রেজাউল। তবে টাকা ফেরত দিলেও রেজাউল ইসলামের ঘুষ বাণিজ্যের নানা অভিযোগ উঠে আসলে স্থানীয়দের মধ্যে এক উত্তাল অবস্থা সৃষ্টি হয়। লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু তাহের গত ১৪ ফেব্রæয়ারী পেনশনরত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। নিয়মানুযায়ী আবু তাহেরের স্ত্রীর নামে পারিবারিক পেনশন চালুর জন্য শিক্ষা অফিসে ধর্না দেয় তার পরিবারের লোকজন। এসময় তাদের সাথে সাক্ষাত হয় অফিস সহকারি কাম কম্পিউটর অপারেটর রেজাউল ইসলামের সাথে। দ্রæত কাজ সম্পন্ন করার জন্য ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন রেজাউল। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা এবং সংসার খরচের কথা চিন্তা করে ঘুষ দিতে রাজি হন প্রয়াত শিক্ষক আবু তাহেরের ছেলে। মৌখিক চুক্তিমত দুই হাজার টাকা দিয়ে যায় রেজাউলের হাতে। তবে সময়মত কাজ না হওয়ায় ঘটনাটি জানাজানি হয়। জানা গেছে, শিক্ষক আবু তাহেরের পেশনের টাকায় পরিবারের যাবতীয় খরচ চলে। অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে বিছানাগত তার স্ত্রী। পরিবারের এই অচলাবস্থার সুযোগ নেয় রেজাউল। ফলে বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজের বিভিন্ন মহলের মানুষ রেজাউলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে আবু তাহেরের পরিবারের লোকজন। রেজাউল ইসলামের দুর্নীতি ও অসাদচরণের সুষ্টু বিচার দাবি করা হয় এ লিখিত অভিযোগে। কয়েকজন শিক্ষক জানান, পেনশনরত অবস্থায় কোন শিক্ষক মারা গেলে তার পরিবারের জন্য পারিবারিক পেনশন চালু হয়। যা একটি মাত্র ফরম পুরণ করে অফিসে দাখিল করলেই দ্রæত কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। অথচ আবু তাহেরের পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ঘুষ বাণিজ্য করেছে রেজাউল ইসলাম। যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবেই দেখছে শিক্ষক সমাজ। অভিযোগে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রেজাউল ইসলাম গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নতুন নয়। শিক্ষা অফিসে সেবা নিতে আসা সব মানুষের কাছ থেকেই তিনি টাকা নিয়ে থাকেন। তার অত্যাচারে শিক্ষকরা অফিসে গিয়ে তার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন। কর্তৃপক্ষ রেজাউলের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করে। তবে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে আন্দোলন কর্মসুচীতে যাবে শিক্ষক সমাজ। এমনটি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নেতৃবৃন্দ। এদিকে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দীন বলেন, সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলাউদ্দীনকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামি তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত করে তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এর প্রেক্ষিতে পরবর্তী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে ঘুষের বিষয়ে এলাকায় চলছে নানা সমালোচনা। ঘুষের সাথে রেজাউল কি একা জড়িত না তার কোন বস এর পেছনে রয়েছেন তা খতিয়ে দেখে দোষী সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।