জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন আইন ২০০৪, সংশোধনী ২০১৩ এবং বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কাজে জন্ম নিবন্ধন এখন আবশ্যক। নতুন জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি নিজেই সব করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম
নতুন জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। এই লেখার মাধ্যমে সব কিছু তুলে ধরা হয়েছে। পয়েন্ট আকারে দেওয়া তথ্যগুলো মনে রাখতে হবে। আপনি যদি ভালোভাবে বিষয়টি পড়েন তাহলে কাজ করতে গিয়ে কোন বেগ পেতে হবে না।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কেন করবেন ?
২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী সকলের জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ধারা ধারা ৫(১), ৬ক এবং ৮(১)। এ আইন লঙ্ঘণকারী কোন ব্যক্তি ৫ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরিতে নিয়োগসহ ১৯ টি ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে পাসপোর্টের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। কারণ জন্ম নিবন্ধন ছাড়া এখন কারও জাতীয় পরিচয়পত্র হয় না। অপরদিকে জন্ম নিবন্ধন ছাড়া কারও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার নিয়ে সমস্যা হবে।
জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন করা যায় কি ?
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুক্র রয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। এ প্রক্রিয়া শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যারা অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করেছেন তাদের বয়স সংশোধন হবে না। এর আগে যদের জন্ম তারা প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র দিয়ে বয়স সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বয়স সংশোধন ফিস ১০০ টাকা।
শিশুর জন্ম নিবন্ধন কিভাবে করবেন ?
শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। টিকা কার্ড ও পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন কপি দিয়ে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে আবেদন করতে হবে। ৪৫ দিন অতিবাহিত হলে ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা এবং তার উর্দ্ধে ৫০ টাকা ফিস প্রযোজ্য। আবেদনের পর কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই করে অনলাইনে শিশুর জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম জানা থাকলে শিশুর জন্ম নিবন্ধনও আপনি সঠিকভাবে করতে পারছেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন লিংক
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া
২০০১ সালের আগে যাদের জন্ম এবং সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রারে নাম নেই। তারা সরাসরি এ সকল অফিসে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে পিতামাতার কাগজপত্র লাগবে না। আর যদি ২০০১ সারের পরে জন্ম হয় তাহলে পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন লাগবে। সরকারি নীতিমালা আর আইনের আলোকে এ সেবা পেতে আপনাকে জানতে হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন
যেকোন স্থান থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করা যাবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করার পর তার প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে হবে। প্রিন্ট কপি নিয়ে যেতে হবে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সচিবের কাছে। সচিব প্রিন্ট কপি ও অনলাইন কপি উভয় মাধ্যমেই রিসিভ করবেন। রিসিভ করার পর তা অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দপ্তরে। আবেদন যাচাই করে ইউএনও ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করবেন।
জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে যদি আপনি না জানেন তাহলে কিভাবে এতোগুলো পক্রিয়া সম্পাদক করবেন ? এজন্য কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে এ লেখাটি পড়ে নিন।
অনলাইনে কারা আবেদন করতে পারবেন
২০০১ সালের পরে যাদের জন্ম তাদের জন্ম নিবন্ধন বা সংশোধনের জন্য পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। যদি পিতামাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন থাকে তাহলে যোকোন স্থান থেকে আবেদন করতে পারবেন। যদি না থাকে তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
অনলাইনে আবেদনের পরবর্তী করণীয়
অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনের পর কিছু কাজ রয়েছে। তা হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন প্রক্রিয়ার মতই। অর্থাৎ আবেদনের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সচিবের কাছে ওই প্রিন্ট কপি নিয়ে যেতে হবে। প্রিন্ট কপি ও অনলাইন কপি উভয় রিসিভ করবেন সচিব। রিসিভ করার পরেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দপ্তরে যাবে অনুমোদনের জন্য। ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কাগজপত্র যাচাই করে বিষয়টির সুরাহা করবেন ইউএনও।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে ক্লিক করুন
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কিভাবে ইংরেজীতে করা যায়
জন্ম নিবন্ধনের সময় বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষায় করা উচিত। বাংলায় সনদ থাকলেও ইংরেজীতে নেই এমন অবস্থায় কি করবেন ? ইংরেজী সংযোজন করতে গেলে তা সংশোধন হিসেবে গণ্য হবে। জন্ম বিন্ধন সফটওয়্যারে কোন কিছু যুক্ত করতে গেলে তা সংশোধন হিসেবে গণ্য করা হয়। জন্ম ও মৃত্যু বিন্ধন বিধিমালা ২০১৮ এর ১৫ বিধি অনুযাযী এই সংশোধন করা যাবে।
জমজ সন্তানের জন্ম নিবন্ধন কীভাবে করা হবে
জমজ সন্তানের ক্ষেত্রে জমজ হিসেবে জন্ম নিবন্ধন করা যাবে। সেক্ষেত্রে দুই সন্তানের জন্য আলাদা আবেদন একটির পর আর একটি সাবমিট করতে হবে। এর পরে জন্ম নিবন্ধনের পরবর্তী পক্রিয়া অনুযায়ী কার্য সম্পন্ন হবে। এখানে মনে রাখা জরুরী যে, দুই সন্তানের মধ্যে একজনের আবেদন করে পরবর্তীতে যদি আরেকজনের আবেদন করা হয় তাহলে সমস্যা সৃষ্টি হবে।
বিবাহিত নারীর জন্ম নিবন্ধন
বিবাহিত নারীর বিলম্বিত জন্ম নিবন্ধন করার বিধান আছে। স্বামীর বাড়ির ঠিকানায় তিনি নিবন্ধন করতে পারবেন এবং জন্ম স্থানের ঠিকানাও যুক্ত করা যাবে। তবে নিবন্ধনে স্বামীর নাম লেখার সুযোগ নেই, পিতা মাতার নাম লিখতে হবে। এ বিষয়টি অনেকেরই জানা থাকার কথা নয়। কারণ এটি সচরচার প্রয়োজন হয় না। এজন্যই আপনাকে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
একটি পারিবারিক কাঠামো তৈরীর জন্য সন্তানের নিবন্ধনের সাথে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন যুক্ত করা হয়। ফলে উত্তারধিকার নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে জনসংখ্যার হিসেবের বিষয়টি সহজ হবে। অপরদিকে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত ‘ফ্যামিলি ট্রি’ শুদ্ধ ডাটাবেজের জন্য জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া উত্তম পদ্ধতি।
-এম এইচ মানিক