প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। সাংবাবিধানিক অধিকারের এই বিষয়টি এখন স্ব স্ব মানুষের পরিচয়ের মাপকাঠি। জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজকর্মে আবশ্যক। শিক্ষা, চাকুরী, পাসপোর্ট ভিসা, ব্যবসা, ভাতার আবেদনসহ দৈনন্দিন জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ লেখার মাধ্যমে নতুন ভোটার আইডি কার্ড (NID) করার নিয়ম এবং অন্যান্য সব বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে আশা রাখি।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড
এখানে উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশন থেকে সময়ে সময়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রাপ্তি এবং ভোটার হওয়া যায়। এর পাশাপাশি প্রায় সারা বছরই উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্রে আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
ভোটার আইডি কার্ড
“ভোটার আইডি কার্ড” হিসেবে বহুল প্রচলিত হলেও আসলে এর নাম জাতীয় পরিচয় পত্র। ইংরেজীতে National Identity Card, সংক্ষেপে NID| বাংলাদেশের কোন নাগরিক যখন ভোটার তালিকাভুক্ত হন, তখন তার একটি জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সময় সাপেক্ষে লেমেনেটেড কার্ড এবং স্মার্ট কার্ড প্রদান করে থাকে। এই কার্ডে পরিচয়বহনকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, পেশা, ঠিকানা, স্বাক্ষর, ও ছবি যুক্ত করা থাকে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে কমিশনের সার্ভারে সংযুক্ত করা থাকে। এই নম্বর দিয়েই সারা বিশ্বের যেকোন স্থান থেকে পরিচয়বহনকারীর সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরী করার পর আপনিও পেতে যাচ্ছেন কার্ডধারীর মর্যাদা।
নতুন ভোটার নিবন্ধন
আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন এবং আপনার বয়স যদি ১৬ বছর বা তার উর্দ্ধে হয় তাহলে আপনি নতুন ভোটার নিবন্ধনের যোগ্য (জাতীয় পরিচয় পত্র)। তবে আপনার বয়স ১৮ বছর পুর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ভোটাধিকার পাবেন না। বয়স পূর্ণ হলেই ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুকিত হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত লিংকে আপনি অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি নতুন ভোটার আইডি কার্ড পাবেন।
নির্বাচন কমিশনের অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন করতে ক্লিক করেুন।
নতুন ভোটার নিবন্ধন ফরম
বাংলদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। নিজের মোবাইল, কম্পিউটর, ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটর দোকান থেকে আবেদন করা যায়। নতুন ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য আটি হচ্ছে আরেকটি ধাপ।
নতুন ভোটার হতে যা যা লাগবে
- এসএসসি/সমমানের সনদপত্রের ফটোকপি
- জন্মনিবন্ধন সনদপত্রের ফটোকপি
- পিতা-মাতা/স্বামী-স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- বাড়ির বৈদ্যুতিক বিল/বাড়ি ভাড়ার রশিদ /ভূমি কর (ঠিকানা প্রমাণের জন্য)
- নাগরিক সনদ পত্র
- পাসপোর্ট (প্রবাসীদের ক্ষেত্রে)
কিভাবে নিবন্ধন করবেন
অনলাইনে উপরোক্ত লিংকে প্রবেশ করে আবেদন করুন। আপনার এসএসসি সনদপত্র অনুযায়ী ফরম পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণ সম্পন্ন হলে সাবমিট করে ফরম ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করতে হবে। প্রিন্ট কপির সাথে নতুন ভোটার হতে যা যা লাগবে উপ শিরোনামে উল্লেখিত প্রস্তুত করুন।
ফরম প্রিন্ট করার পর করণীয়
নতুন ভোটার আইডি কার্ড প্রাপ্তি বা নতুন ভোটার হওয়ার জন্য (ভোটার নিবন্ধন) অনলাইন আবেদন ফরমের কয়েকটি কলাম আপনাকে পূরণ করতে হবে।
ফরমে ৩৪ নং ৩৫ নং কলামে আপনার মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন বা নিকটাত্মীয় শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করবেন। স্বাক্ষরকারীর সাথে তার NID নম্বর দিতে হবে।
৪০, ৪১ ও ৪২ নং কলামে যাচাইকারী হিসেবে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বর)/কাউন্সিলর/ইউপি চেয়ারম্যান/মেয়রের স্বাক্ষর নিতে হবে। স্বাক্ষরের সাথে অবশ্যই তাঁর NID নম্বর যুক্ত করে তাঁর নামের সীল দিতে হবে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য এ কাজগুলো গুরুত্ব সহাকারে করতে হবে।
প্রিন্ট কপি নিয়ে করণীয়
ভোটার নিবন্ধন ফরমের প্রিন্ট কপিতে শনাক্তকারী ও যাচাইকারীর স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং সীল ঠিকঠাক আছে কি না তা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে জমা দেওয়া যাবে। আপনার বসবাসের এলাকার আওতাধীন উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে ফরম জমা দিন। জমা দেওয়ার পরে সেখানে রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ হবে এবং একটি নম্বর পাবেন। এই নম্বর দিয়ে পরবর্তীতে আপনার নিবন্ধন ফরমের অবস্থান জানতে পারবেন।
NID সংশোধনের প্রয়োজন হলে লেখাটি পড়ে আসতে পারেন।
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি
ভোটার নিবন্ধন ফরম যখন নির্বাচন অফিসারের হাতে পড়বে তখন যাচাই করার পালা। ফরমের সাথে সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক আছে কি না তা যাচাই বাছাই করা হবে। কাগজপত্র সঠিক থাকলে তিনি এপ্রুভ দিবেন অনলাইনে। তখন আপনার মোবাইল নম্বরে ছবি তোলার স্থান, তারিখ ও সময় উল্লেখ পূর্বক একটি বার্তা পাবেন। এ বার্তা পাওয়ার জন্য অনলাইন নিবন্ধন ফরম পূরণের সময় একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
ফরমের সাথে দাখিলকৃত সব কাগজপত্র সঠিক থাকলে যাচাই বাছাই দ্রুত হয়। সঠিক থাকলে সাধারণত ৭-১৫ দিনের মধ্যে এপ্রুভ হয়ে থাকে। নতুন ভোটার আইডি কার্ড প্রাপ্তির জন্য এই কাজপি নির্বাচন অফিস সুচারুভাবে করে থাকে।
কতদিন পর পাবেন NID
ছবি তোলা কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার আপনার আর কো কাজ নেই। এবার কাঙ্খিত জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ছবি তোলার ১৫ দিন পরেই NID পেতে পারেন। এ প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচন অফিস সময় নেয় ১৫-৪৫ দিন পর্যন্ত।
NID হয়ে গেলে আপনার মোবাইলে যাবে একটি বার্তা। এই বার্তা অনুযায়ী আপনি এবার অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
পরিশেষে বলতে হয় যে, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ বিষয়। আবেদন থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইনে প্রিন্ট পাওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে কাজ সম্পাদন হয়। নতুন ভোটার আইডি কার্ড পেতে সময় দিতে হবে। তাই ধর্য ধরে আপনাকে সবগুলো ধাপ সম্পন্ন হতে সময় দিতে হবে। নিজের কাজ নিজে করা আলাদা প্রশান্তি।
-এম এইচ মানিক
mazedulhaquemanik@gmail.com