বাড়িওয়ালার প্রতারণার কবলে মেহেরপুরের বিশিষ্ট পাখি গবেষক ও কলামিস্ট এম এ মুহিত
এম চোখ ডট কম, মেহেরপুর :
বাড়িওয়ালার প্রতারণার কবলে পড়েছেন মেহেরপুরের বিশিষ্ট পাখি গবেষক ও কলামিস্ট এম এ মুহিত। মুহিতের ফ্লাট থেকে কৌশলে পানির লাইন নিয়ে ব্যবহার করা হয় অন্য ফ্লাটে। যার বিদ্যুত বিল দিতে হয় এমএ মুহিতকে। বিষয়টি ফাঁস হলে বাড়ি ছেড়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেওয়া হচ্ছে এমএ মুহিতকে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তীব্র সমালোচনার মুখে বাড়ির মালিক।
জানা গেছে, করোনা কালীন লকডাউনের মধ্যে মেহেরপুর মল্লিক পুকুরের পাড়ে ইটালি প্রবাসী সোলাইমানের দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বাড়ি ভাড়া নেন এম এ মুহিত। বাড়ি মালিকের ভাইরাভাই জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আজিমুল বারী মুকুল বাড়ি ভাড়া দেওয়া ও বাড়ি ভাড়া নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন। এম এ মুহিত ওই ভবনের তৃতীয় তলার ফ্লাটটি হেল্প ফাউন্ডেশনের ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট ও জনকল্যাণ কাজের জন্য ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করেন। বাড়ির দ্বিতীয় তলা নির্মান কাজ অসামাপ্ত থাকায় ভূতুড়ে পরিবেশের ভিতর দিয়ে ৩য় তলায় উঠতে হয়েছে। তৃতীয় তলার বাসার অনেক সমস্য থাকায় মুকুলকে জানানো হলে তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সময়ের মধ্যে বাড়ি ভাড়া চুক্তি সম্পাদনের কথা থাকলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি মুকুল।
এম এ মুহিতের অভিযোগ, ভাড়া নেওয়ার পর আজিমুল বারি মুকুলের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। তিনি এইভাবে ১৫ মাস বাসার সব কিছু ঠিক করে দেব বলে ঘুরিয়েছে। বাড়ির মালিক ইটালি প্রবাসী সোলাইমান যখন বাংলাদেশে তাঁর বাড়িতে আসেন তখন তিনি বাড়ি দেখে খুব হতাশ হয়েছিলেন। এম এ মুহিতকে সব কিছু নিজের টাকায় ঠিক করে নিয়ে ভাড়া থেকে কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বাড়ির মালিক। কিন্তু বিষয়টি নিয়েও মুহিতের সাথে অসদাচারণ করেন মুকুল। পক্ষান্তরে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য তিনি চাপ দিতে থাকেন।
এদিকে ফ্লাটের ট্র্যাঙ্কিতে কোন পানি থাকার নতুন সমস্যা দেখা দেয়। মুহিতের নিচের ফ্লাটে ডক্টরস ল্যাবের রোগীরা পানির সংকটে পড়ে। দুই মাস এইভাবে চলতে থাকে। মোটর দিয়ে ট্র্যাঙ্কিতে পানি তোলা হলেও অল্প সময়ের মধ্যে পানি ফুরিয়ে যায়। এ ভবন থেকে অন্য ভবনে গোপনে পানির লাইন দেওয়ায় অল্প সময়েই পানি ফুরিয়ে যায়। যা মুহিতের নজরে আসে। পানির মটরের সমস্ত বিদ্যুত খরচ গুনতে হয়েছে মুহিতকে। এতো কিছুর পরেও তা সমাধান না করে উপরন্ত বাড়ির মালিককে ভুল বুঝিয়েছে তার ভাইরাভাই। ফলে মুহিতকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন তিনি। তবে নাছোড়বান্দা ভুক্তভোগী এম এ মুহিত। অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি বাড়ির মালিককে বাড়ি ভাড়া আইনের কথা বলেন। এতে মুহিতের উপর আরও ক্ষিপ্ত হন তিনি।
ডক্টরস ল্যাবের ম্যানেজার সাজু শেখ বলেন, পানির চোরাই লাইনটা প্রথমে আমার চোখে পড়ে। আমরা যখন পানি পায়না তখন মুকুলকে ফোন করলেও আসে না। রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমরা নিজেরা আলাদা পানির লাইন নিয়ে ব্যবহার করছি।
হেল্প ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক দিলারা জাহান বলেন, আমি মুকুলের বাসা থেকে একজনকে এম এ মুহিতের ফ্লাটের মোটর চালাতে দেখেছি। তাদের জিজ্ঞাসা করলে বলে মুকুল ভাই আমাদের এই মোটর চালাতে বলেছে। দিলারা জাহান আরও বলেন, মুকুল তার চোরাই পানির লাইনটি চলমান রাখার জন্য বাসা ছেড়ে দেওয়া জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছেন।
মেহেরপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি রফিকুল আলম বলেন, পানির লাইন চুরি ধরার পর বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলাটা এক ধরনের প্রতারণা। করোনাকালীন সময়ে মানুষের মানুষিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য এই ফ্লাটে এম এ মুহিত একটি মানসম্মত মেহেরপুর ডেস্কের স্টুডিও তৈরি করেছেন। এবং হেল্প ফাউন্ডেশনের উয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট ডেভেলপ করে মেহেরপুরের যুব সমাজকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ করে তুলছেন। দিলারা জাহান এখান থেকে থেরাপী সেন্টার ও জিম সেন্টার পরিচালনা করে থাকেন। এম এ মুহিত হেল্প ফাউন্ডেশনের সমস্ত প্রোজেক্টের পরিচালনা করছেন। রফিকুল আলম আরও বলেন, এই ফ্লাট থেকে এম এ মুহিত লকডাউনে ভার্চুয়াল বইমেলা করে বাংলাদেশে রোকর্ড করেছেন। তার সাথে প্রতারণার প্রতিকার হিসেবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এম এ মুহিত বলেন, আমাকে গোপন করে দীর্ঘ দিন পানির চোরাই লাইন ব্যবহার করে আজিমুল বারি মুকুল প্রতারণা করেছে এবং আমাকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করেছে। মুকুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার ফোজদারি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আজিমুল বারী মুকুলের মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।