পুলিশকে ফাঁসাতে গিয়ে হাজতঘরে মামলার বাদি
মেহেরপুরের চোখ ডট কম, মেহেরপুর :
মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন আবু জাফর (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) মেহেরপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে দ্বিতীয় আমলী আদালত (গাংনী) এ আদেশ দেন।
আবু জাফরের বাড়ী গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়ীয়া গ্রামে। তিনি একজন তামাক ব্যবসায়ী। শ^শুর ও স্ত্রীর নামে তিনি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
জানা গেছে, গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের তোতা মিয়ার মেয়ে চামেলী খাতুনের সাথে একই গ্রামের আবু জাফরের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ১১ বছর বয়সী এক ছেলে ও সাড়ে তিন বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। দাম্পত্য কলহের জের ধরে গেল তিন বছর ধরে চামেলী খাতুন পিতার বাড়িতে রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে নানা চেষ্টায় সমাধান না হলে গত বছর মেহেরপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন চামেলী খাতুন। পারিবারিক আইন, খোরপোস ও যৌতুকের অভিযোগে স্বামী আবু জাফরের নামে এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন তিনি।
এদিকে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গেল বছরের ২০ নভেম্বর স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন আবু জাফর। তবে এর আগে স্ত্রী ও শ^শুরকে ফাঁসতে সে নানা ফন্দি আটা শুরু শুরু করে। এক পর্যায়ে গত বছরের অক্টোবরে মেহেরপুর আদালতে একটি মামলা করেন তিনি। শ^শুর বাড়ি থেকে স্ত্রীকে আনতে গেলে মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন মর্মে মামলায় আর্জিতে উল্লেখ করেন আবু জাফর। অভিযোগে বলা হয়, তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আবু জাফরের শরীরে জখম করেছে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তার শরীরের জখমস্থলে কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগের উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গাংনী থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, গাংনী থানার এসআই আশিকুর রহমান মামলাটি তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত কার্যক্রমে মামলার বাদি আবু জাফরের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। মেডিকেল রিপোর্টের জন্য মামলার আর্জিতে উল্লেখিত হাসপাতালে চিকিৎসার প্রমাণপত্র দিতে বলেন এসআই আশিকুর রহমান। এছাড়াও ঘটনার স্বাক্ষীদের বয়ান গ্রহণের জন্য বাদির সহযোগিতা কামনা করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতি নানা অসযোগিতা করতে থাকেন আবু জাফর। যার মধ্য দিয়ে আদালতের আদেশে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় এগিয়ে আসতে থাকে। গেল ২৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্ধারিত শেষ সময়ের দুই দিন আগে আবু জাফরের কাছ থেকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার একটি ডকুমেন্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে আসে। তবে হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকায় মামলা তদন্তে দুশ্চিন্তায় পড়েন এসআই আশিকুর রহমান। বাদির অসযোগিতা ও সময়মতো কাগজপত্র না দেওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব নয় এমন ব্যর্থতার কথা জানিয়ে আদালতে সময় প্রার্থনার আবেদন করেন এসআই আশিকুর রহমান।
এদিকে আবু জাফরের কাছ থেকে পাওয়া চিকিৎসার কাগজের সুত্র ধরে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল রিপোর্ট আনতে যান এসআই আশিকুর রহমান। কিন্তু হাসপাতালের রেকর্ডপত্র দেখে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। আবু জাফর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ঠিকই তবে তা মারধরের ঘটনায় নয়। গত বছরের ১০ অক্টোবর মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তার পা জখম হয়। যার চিকিৎসায় দেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎকসকরা। এসব রেকর্ডপত্র ঘেটে পুলিশের কাছে সন্দেহ হয় যে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি শ^শুর আর স্ত্রীর হামলার ঘটনা সাজিয়ে মামলা করেছে আবু জাফর।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, মামলা তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা না করে উল্টো পুলিশের ব্যর্থতা দাবি করে আদালতে অভিযোগ করেন মামলার বাদি আবু জাফর। এ বিষয়ে স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হন এসআই আশিকুর রহমান। এসময় তিনি বিজ্ঞ আদালতে হাসপাতালের রেকডপত্র উত্থাপন করেন তিনি। তদন্তকারী কর্মকর্তার তথ্য প্রমাণ দাখিলের পর বিজ্ঞ আদালত আবু জাফরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশে কোর্ট পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে।
মিথ্যা মামলায় স্ত্রী আর শ^শুরুকে ফাঁসাতে আবু জাফর নাটকীয় মামলা সাজিয়েছে মর্মে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে। মিথ্যা মামলা দায়ের করায় আবু জাফরের দৃষ্টান্তমূলক সাজা আর নিরপরাধ শ^শুর ও স্ত্রী হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।