550
বাবা হতে গিয়ে বিপত্তি !
এম চোখ ডট কম, গাংনী: একদিকে তিন সন্তানের মূত্যু শোক অন্যদিকে এক সন্তানের ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এমন পরিস্থিতিতে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের দিনমজুর হাসান আলীর। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে চোখের পানিই যেন তার কষ্ট নিবারণের একমাত্র সম্বল। পেশায় দিনমজুর হাসান জানান, তার স্ত্রী রজনী খাতুনের কয়েকবার গর্ভপাতের কারণে নানা চিকিৎসা দিতে হয়েছে। এর পরে আসে বাবা হওয়ার সুযোগ। পরীক্ষায় জানা যায় রজনীর গর্ভে এবার চারটি সন্তান রয়েছে। শুধু হাসানের পরিবারই নয়, প্রতিবেশিরাও বেশ আনন্দে উচ্ছাসিত। নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করান হাসান। সন্তানের মুখ দেখার জন্যও পাগল প্রায় স্ত্রী রজনী। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসান তার স্ত্রী রজনীকে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে রজনীকে পাঠানো হয় ইউনিহেলথ স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালে। জানা গেছে গেল ১ জানুয়ারি রজনীর কোল জুড়ে আসে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। সিজারিয়ান অপারেশন হয় ঢাকার ওই হাসপাতালে। চার শিশুরু নাম রাখা হয় রেজয়ান, রাইয়ান, রাফসান ও সুমাইয়া। ওই রাতেই সুমাইয়া মারা যায়। ৭ জানুয়ারী মারা যায় রাইয়ান ও রাফসান। সন্তান প্রসবের আনন্দ বেদনা নিমিষেই বিষাদে পরিনত হয়। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা চলতে থাকে রেজওয়ানের। জীবিত সন্তানের চিকিৎসায় এরই মধ্যে অনেক কিছুই বিক্রি করতে হয় হাসানকে। সেই সাথে অন্ততঃ আড়াই লাখ টাকা ধার দেনা করতে হয়েছে তাকে। হাসানের স্ত্রী রজনী খাতুন বলেন, সন্তানের মুখ দেখে আনন্দ হয়েছিল কিন্তু সেই সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনাই। অনেক ধার দেনা করে চিকিৎসা নেয়া হয়েছে। এখন একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা অন্যদিকে দেনার ভার। এখনও কেউ কোন সহযোগিতা করেনি। কেউ একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সন্তানের চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো। প্রতিবেশি বেগম খাতুন ও জোহরা খাতুন জানান, হাসান অত্যন্ত গরীব ও অসহায়। রজনী চার মাস অন্তঃস্বত্তা থাকাকালীণ সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য তার স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেনায় জর্জরিত। এর মধ্যে তিনটি সন্তান মারা গেছে। একটি ছেলে বেঁচে আছে। তার ভাল চিকিৎসা করা জরুরী। কোন আয় রোজগার নেই তার। সন্তান হারানোর শোকের পাশাপাশি এখন দেনাদাররা পাওনা পরিশোধে চাপ দিচ্ছে। এদের পাশে কেউ নেই। সরকারী সহযোগিতা পেলে পরিবারে একটু স্বস্তি আসতো। হাসানের পরিবারের সদস্যরা জানায়, মায়ের গর্ভে চার সন্তান থাকায় সবগুলো অপুষ্টি ও নানা রোগ নিয়ে ভুমিষ্ট হয়। ডাক্তারা বলেছেন- নবজাতকের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গানগুলো পুর্ণাঙ্গ রুপ পাইনি। তাই এই নবজাতককে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎিসা দেওয়া জরুরুী। ঢাকার কোন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে আর্থিক দৈন্যতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা জানান, স্থানীয়ভাবে অনেকেই তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য কিছু সহায়তা করেছেন। আবার কেউবা টাকা ধার দিয়েছেন। জীবিত শিশুটির চিকিৎসা করানো মত টাকা কিংবা সম্পদ কোনটিই হাসানের নেই। অসহায় এ পরিবারটির সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানালেন তিনি। বিষয়টি গোচরে আনলে গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, প্রতিটি সরকারী হাসপাতালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের শাখা রয়েছে। সেখানে হাসান যোগাযোগ করলে সহযোগিতা পাবেন। তাছাড়া হাসান তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য আবেদন করলে সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন এই কর্মকর্তা।