তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, মেহেরপুর(২৪/০৬/২০২২):
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্ট্যাম্পিং করে নিয়োগ নিয়ে এমপিও ভুক্ত হয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর সুবিধা ভোগ করে আসছেন গাংনী সরকারী ডিগ্রি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক ফজলুল হক। যার ইনডেক্স নম্বর ৪০৯৫৯৯। এমপিও ভুক্তির সুবিধা নিয়েও বাঁধা পড়ে জাতীয় করণে। কলেজের অধ্যাক্ষসহ প্রভাষক কর্মচারীদের সকলের চাকুরী জাতীয়করণ হলেও বাদ পড়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন তদবীরের মাধ্যমে জাতীয় করণে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু নিয়োগকালীন সময়ের বৈধতা দাবী করলেও স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি।
জানাগেছে, শুক্রবার ২৯ জুলাই ১৯৯৪ ইং এবং বাংলা ১৪০১ সনের ১৪ই শ্রাবন তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় আবশ্যক: গাংনী ডিগ্রি কলেজ গাংনী মেহেরপুরের জন্য বেসরকারী কলেজের বিধি অনুযায়ী, ভূগল, ইসলামী শিক্ষা ও পরিসংখ্যান বিভাগে প্রভাষক আবশ্যক। এক শত টাকার (অফেরত) ব্যাংক ড্রাফটসহ অধ্যক্ষ বরাবরে আবেদনের শেষ তারিখ ৩০ আগস্ট ১৯৯৪ইং। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ৩০ আগস্টের পরে কোন সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই কৌশল অবলম্বনে প্রভাষক ফজলুল হক প্রকৃত বিজ্ঞপ্তি স্ট্যাম্পিং করে, বিজ্ঞপ্তির নিচে “উল্লেখ্য, স্নাতকোত্তর ফলাফল প্রত্যাশী পরীক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে” এমন বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত করে আবেদন করেন, যা মুল পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে নেই। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সংসদ সদস্যের সাথে আতাত করেই প্রয়াত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল খালেককে জিম্মি করেই নিয়োগ নিয়েছিলেন। এই অনিয়মের মধ্যে নিয়োগ নিয়ে এমপিও ভুক্ত হয়ে বেতন ভাতাও ভোগ করে আসছেন ২৭ বছর। এবিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক কয়েক দফা তদন্ত হলেও অদৃশ্য হাতের ইশারায় তার বেতন-ভাতা বন্ধ হয়নি।২০১৬ সালে এই কলেজটি জাতীয় করণের আওতায়ভুক্ত হয়। প্রথম দিকে জাতীয় করণের তালিকায় তার নাম না থাকলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে জাতীয় করণের তালিকায় সংযুক্ত হয়েছেন এই প্রভাষক। তিনি কলেজের চাকরীর পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠা করা ফজলুল হক আইডিয়াল একাডেমি পরিচালনা করে আসছেন। অভিযোগ থাকলেও তিনি নিয়মিত ভাবে চাকরী করেও অনিয়মিত স্বাক্ষর করে যাচ্ছেন কলেজে। নিজের খামখেয়ালীতে কলেজের ক্লাশ নেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বেশি সময় ব্যায় করেন নিজের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ফজলুল হক আইডিয়াল একাডেমিতে।
তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই অনিয়মে নিয়োগ নিয়ে বীরদর্পে চাকরী করে আসছেন তিনি। কলেজের অনেক প্রভাষকই এ বিষয়ে অবগত হলেও তার বিরুদ্ধে কেউই মুখ খোলার সাহস করে না। মুখ খুললেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন প্রভাষক ফজলুল হক। কথা বলতে চাইলে কয়েক জন প্রভাষক এ প্রতিবেদকের কাছে তার বিষয়ে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করে বলেন এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা। তবে তার নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি।
বিজ্ঞপ্তি স্ট্যাম্পিং করে চাকরী করার বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলুল হক বলেন, অনেক পুরানো নিয়োগ এ বিষয়ে নিউজ করার দরকার নেই। তবে তার নিয়োগ বৈধ বলে দাবী করেন।
গাংনী সরকারী ডিগ্রি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম জানান, অনেক আগে নিয়োগ হয়েছে তৎকালীন সভাপতি ও অধ্যক্ষ এ বিষয়ে বিষয়ে জানেন আমি কিছু বলতে পারবো না।
তৎকালীন সভাপতি ও মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গণি জানান, আমি সে সময় কলেজের সভাপতি ছিলাম কিন্তু আমি কোন নিয়োগের বিষয়ে জানি না। আমি সভাপতি হলেও সে সময় যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বোর্ডে আমার প্রতিনিধি থাকতো তাই ফজলুল হকের নিয়োগের বৈধতার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছিনা।