ভাঙছে সংসার, চড়া মূল্য দিচ্ছে কেউ কেউ ।। গাংনীতে প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে সেই পরকিয়া প্রেমের পরিণতি
এম চোখ ডট, কম, ডেস্ক:
বিদেশে স্বামীর রক্তঘাম ঝরানো কাজে উর্পাজিত টাকা দিয়ে নতুন বাড়ি নির্মান করছিলেন স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৪০)। সেই নির্মান কাজে আসা খোয়াভাঙ্গা মিস্ত্রি লাল্টুর (৩৫) সাথে জড়িয়ে পড়লেন পরকিয়া প্রেমে। দু’জনে হাঁটলেন পাপের পথে। এক পর্যায়ে তা গড়ালো চরম বিশাদে।
পরকিয়া প্রেমিকার বাড়ির পরিত্যক্ত কুয়া থেকে মিললো প্রেমিকের গলিত লাশ। এ ঘটনায় প্রেমিকের পরিবারে যেমনি চলছে শোকের মাতম তেমনি পরকিয়া প্রেমের গল্পে সমালোচনার ঝড় চলছে এলাকাজুড়ে। যারা স্বজনদের ভাল রাখতে বছরের পর বছর ধরে বিদেশে অমানবিক পরিশ্রম করছেন, পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাতে; সেই মানুষগুলোর অনেকের স্ত্রীর এমন অনৈতিক কর্মকাÐ মাঝে মাঝে সামনে আসে। আবার সুযোগ বুঝে অনেক পুরুষ তার স্ত্রী সন্তান রেখে জড়িয়ে পড়েন পরকিয়ায়। আর এর মাসুল দিতে হয় জীবনের বিনিময়ে। যা সমাজের চরম অবক্ষয় হিসেবেই দেখছেন সচেতন মানুষের অনেকে। আজকের মর্মান্তিক এই পরকিয়া প্রেম বিষাদের গল্প মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামে।
জানা গেছে, নিখোঁজের একমাস পর পরকীয়া প্রেমিকার বাড়ির পরিত্যক্ত কুপ থেকে লালটু (৩৫) নামের এক নির্মান এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম। বুধবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম হাড়াভাঙ্গা গ্রামে এ অভিযান চালায়। নিহত নির্মান শ্রমিকের পরকিয়া প্রেমিকা সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী সাবিনা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত লাল্টু হাড়াভাঙ্গা গ্রামের পাশের প্রতিবেশী গ্রাম নওদাপাড়ার ছাইনুদ্দীনের ছেলে। গাংনী থানা পুলিশের আন্তরিকতায় এ ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়।
পুলিশ জানায়, গেল ১২ সেপ্টেম্বর রাতে নিজ বাড়ি থেকে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পর থেকেই লাল্টু নিখোঁজ হয়। পরকিয়া প্রেমিকা তাকে হত্যা করে মরদেহ গুম করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। নিখোঁজ ছেলের সন্ধান চেয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর লাল্টুর মা গাংনী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন (জিডি)। গোপন অনুসন্ধানে পরকিয়া প্রেমিকা ছাবিনার বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত কুয়ার মধ্যে মরদেহ রয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হতে ছাবিনাকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ হেজাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবদ করা হয়। সাবিনার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পরিত্যক্ত কুপ থেকে গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বামী সংসার ছেড়ে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করায় অভিমানী প্রেমিক লাল্টু গলায় রসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং মৃত্যুর চিহ্ন মুছে দিতে তার মরদেহ কুয়ায় ফেলে দেওয়া হয় বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে সাবিনা খাতুন। তবে তার বক্তব্য সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
নিহত লাল্টুর ভাই পল্টু মিয়া জানান, লাল্টু একজন নির্মান শ্রমিক। প্রবাসীর স্ত্রী সাবিনার বাড়িতে ইটের খোয়াভাঙ্গা কাজ করার সুবাদে যাওয়া আসা। এক পর্যায়ে তারা জড়িয়ে পড়ে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্কে। গেল ১০ সেপ্টেম্বর লালটুর বাড়িতে গিয়ে সাবিনা খাতুন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে ১২ তারিখে নিখোঁজ হন লালটু। এতে করে সাবিনার প্রতি সন্দেহ আরও প্রকট হয়।
বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। নজরদারী করা হয় সাবিনার বাড়ির উপর। এপ্রকার নিশ্চিত হয়ে পুলিশ সাবিনাকে গতকাল মঙ্গলবার হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে মরদেহ কুয়ার রয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয় সাবিনা। বুধবার দুপুরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে গলিত লাশ ও হাড়গোড় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
যেভাবে উদ্ধার হয় লাশ:
জানা গেছে, মরদেহ উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস দলের সদস্যদের সহায়তা নেয় পুলিশ। প্রথমে মই দিয়ে কুয়ার মধ্যে নামার চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। কিন্তু কুয়ার মধ্যে নাইট্রোজেন গ্যাসের তীব্রতায় সেখানে মানুষের পক্ষে টিকে থাকায় সম্ভব নয় বিধায় উদ্ধার তৎপরতা বিঘœ ঘটে। পরে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস থেকে নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসরণ ও প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করার যন্ত্র আনা হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে আবারও শুরু হয় উদ্ধার কাজ। কুয়ার তলদেশে কিছুটা ময়লা আবর্জনা ছিল। সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার পরেই মানুষের গলিত পা চোখে পড়ে। এর পর পর্যায়ক্রুমে শরীরের বিভিন্ন অংশ বিছিন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে তা উপরো তোলা হয়।
মরদেহের সুরতহাল:
গলিত বিছিন্ন মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেন গাংনী থানার এসআই জহির রায়হান। তিনি বলেন, মাথার খুলি, পাজরের কাঠি, মাংস বিহীন হাড়-হাড্ডি পাওয়া গেছে। এছাড়াও নিহতের কোমরের বেল্ট, পোষাক ও লাল্টুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রয়েছে বলে জানান তিনি।
মরদেহ শনাক্ত:
গলিত মরদেহের হাড়-হাড্ডি দেখে শনাক্ত করা না গেলেও নিহতের শরীরের পোষাক দেখে পরিবারের লোকজন তাকে শনাক্ত করেন। প্যান্টের একটি পকেটে মেলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। ফলে নিশ্চিতভাবেই এটা লাল্টুর দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করে তার পরিবারের লোকজন।
লাল্টু ও সাবিনার পারিবারিক পরিচয় :
গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামের দিনমজুর কৃষক ছাইনুন্দীনের তিন ছেলের মধ্যে লাল্টু সবার বড়। দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ের জনক লাল্টু। এক মেয়ের বয়স ১৪ এবং আরেকজনের বয়স তিন বছর। অপরদিকে সাবিনা খাতুন হাড়াভাঙ্গা গ্রামের সৌদি প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। সাবিনার পিতার বাড়ি পাশর্^বর্তী ব্রজপুর গ্রামে। দুই বছর ধরে সৌদে রয়েছেন জাহাঙ্গীর। দাম্পত্য জীবনে তাদের তিন মেয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে একজন বিবাহিত। অপর দুজনের মধ্যে একজনের যথাক্রমে ৭ ও ৩ বছর।
এলাকার বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, এর আগেও পরকিয়া প্রেমে জড়িয়েছিলেন লাল্টু। আর সেই নারীও ছিলেন একজন প্রবাসির স্ত্রী। সেই নারীর সঙ্গে মেলামেশার অন্তরঙ্গ ছবি তুলে ব্লাকমেইল করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি প্রকাশের মধ্য দিয়ে। যে বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ফলে লাল্টুর এই করুণ পরিণতির জন্য তাকেই দায়ী করছেন এলাকার মানুষ। অপরদিকে তার স্ত্রী ও সন্তানেরা দুঃখের অথৈ সাগরে পড়ায় আফসোস ছাড়া আর কিছুই বলার নেই বলেও মন্তব্য অনেকের।
গাংনী থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহত লাল্টর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। ঘটনাটি আরও গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। ময়ানতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তি ও পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন হবে।
আরও পড়ুন : গাংনীর ছয় বিএনপি নেতা কারাগারে ভোটের আগে নতুন গাড়ি পাবেন ডিসি-ইউএনওরা