ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে প্রথম মামলা ।। গাংনীতে সাত জনের নামে ওয়ারেন্ট
এম চোখ ডট কম, গাংনী:
বাড়িসহ জমি দবর দখলের অভিযোগে গাংনীর ফতাইপুরের জিয়ারুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক এবং এ কাজে সহায়তা করার জন্য ভোমরদহ গ্রামের আব্দুর রহমান, কৃষি ব্যাংক গাংনী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শামসুল আলম এবং রুপালী ব্যাংক গাংনী শাখার ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলামের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা দিয়েছেন আদালত। একই সাথে ওই জমির হোল্ডিং বিধি সম্মতভাবে বাতিল না করায় গাংনী পৌর মেয়রের নামেও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ তরিকুল ইসলাম আদেশ জারী করেন।
সদ্য পাশ হওয়া ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর সংশ্লিষ্ঠ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন রফিকুল ইসলাম। দেশের বহুল আলোচিত ও কাঙ্খিত এ আইনে মেহেরপুর জেলায় এটিই প্রথম মামলা।
এ বিষয়ে গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী বলেন, বিধি সম্মতভাবেই হোল্ডিং বাতিল করা হয়েছে। পৌরসভার আইন বিধি মোতাবেক প্রত্যোকটি হোল্ডিং ব্যবস্থাপনা করা হয়। বিষয়টি মেয়রের ব্যক্তিগত নয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে বিজ্ঞ আদালতে বিষয়টির সুরাহা চাওয়া হবে।
জানা গেছে, জিয়ারুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক ও জাকির হোসেন এবং আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আনজুমানারা খাতুন কৃষি ব্যাংক গাংনী শাখা থেকে ২০১০ সালে ৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এর বিনিময়ে ফতাইপুর গ্রামের একটি জমি মটগেজ দেন তারা। পরবর্তীতে ২০১১ সালে তারা একই জমি ভোমরদহ গ্রামের আব্দুর রহমানের কাছে বিক্রি করে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করে দেন। আব্দুর রহমান জমিতে একটি বাড়ি নির্মান করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আব্দুর রহমান ওই জমি আব্দুর রশিদ নামের একজনের কাছে বিক্রি করেন।
২০২১ সালে আব্দুর রশিদের কাছ থেকে ওই জমি কিনে নেন আব্দুর রহমান। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আব্দুর রহমান বাড়িসহ ওই জমি বিক্রি করে দেন চৌগাছা গ্রামের রফিকুল ইসলামের কাছে। রফিকুল ইসলাম বাড়ি দখল নেন এবং খারিজ, খাজনা ও বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করেন তার নামে। পৌরসভা থেকে হোল্ডিংও খোলা হয় রফিকুল ইসলামের নামে।
এদিকে ঋণ খেলাপির দায়ে কৃষি ব্যাংক তড়িঘড়ি করে আব্দুর রাজ্জাকের জমি গোপনে নিলাম করে। কাগজপত্রের নিয়মাবলী গোপনে জোড়াতালি দিয়ে নিলাম সম্পন্ন করেন। মটগেজকারী আব্দুর রাজ্জাকের আপন ভাই জিয়ারুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে কৃষি ব্যাংক। কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক শামসুল আলম একটি ভূয়া দলিলের মাধ্যমে অবৈধভাবে নিলাম করেন।
এদিকে রফিকুল ইসলাম ওই জমি ও বাড়ি মটগেজ দিয়ে রুপালী ব্যাংক গাংনী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। কাগজপত্রের বৈধতা আইন অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে জমির মালিকানা নিশ্চিত হয়ে ঋণ দেয় রুপালি ব্যাংক। যা নিশ্চিত করেছেন রুপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে রুপালী ব্যাংক ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম কৃষি ব্যাংকের কাছ থেকে নিলামে নেয়া জিয়ারুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে দমি দখলের কাছে সহায়তা করেন।
এদিকে একই জমি রফিকুল ইসলাম ক্রয় করেন আব্দুর রহমানের কাছ থেকে আর জিয়ারুল ইসলাম কেনেন কৃষি ব্যাংকের নিলামে। জিয়ারুল ইসলাম নিলালের মাধ্যমে জমির মালিক দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন ও রফিকুল ইসলামের সাথে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। অপরদিকে ওই জমির হোল্ডিং বাতিল করে পৌরসভা।
প্রতিকার পেতে রফিকুল ইসলাম ৭ জনকে আসামী করে ভূমি অপরাধ প্রতিােধ ও প্রতিকার আইনে চলতি মাসে মামলাটি দায়ের করেন। যার নং- সিআর ৬৮০। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সাত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।