মুজিবনগরে এলডিডিপি প্রকল্পের টাকা নিয়ে কর্মীদের নয়-ছয় !
এম চোখ ডটকম,মুজিবনগর:
মুজিবনগরে সরকারি অর্থায়নে ছাগল ও মুরগির সেড নির্মানে অনিয়মের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। যে কাজগুলো উপকারভোগীদের সম্পাদন করার জন্য ব্যাংক হিসেবে টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা কৌশলে প্রকল্পের কর্মীরা হস্তগত করে সেড নির্মান শুরু করলেও নানা অনিয়মে উপকারভোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। ফলে মাঝপথে থেমে গেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল কাজটি।
জানা গেছে, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণি সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) প্রডিউসার গ্রুপ (পিজি) গঠন করে সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছাগল ও মুরগী পালনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকের হাতে ২০ হাজার টাকা করে একটি ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছিল। একাউন্ট পে এই চেকের টাকা মালিক ছাড়া প্রাণি সম্পদ অফিসের পক্ষে উত্তোলন সম্ভব না।
জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক মুজিবনগর শাখার পিজি সদস্যদের নামীয় একাউন্টে এ টাকা দেওয়া হয়। সদস্যদের ম্যানেজ করে এলডিডিপি প্রকল্পের প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তানিয়া আখতার ও প্রাণি সম্পদ মাঠ সহকারি মিঠুন আলী টাকাগুলো নিজেদের আয়ত্বে নেন। প্রকল্পের ডিজাইন অনুযায়ী নিজেরা সেড তৈরী করে দেবেন এমন প্রতিশ্রুতিতে সদস্যদেরকে টাকা দিতে বাধ্য করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, তিন নম্বর ইট, পরিমাণে কম বালু ও সিমেন্ট দিয়ে নির্মান কাজ করা হচ্ছিল। খড়ি হিসেবে বিক্রি হয় এমন কাঠ দিয়ে সেডের বাটাম বানানো হয়। এতে উপকারভোগী সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
অভিযোগে মোনাখালী ইউনিয়নের রামনগরের পিজি সদস্য রুপালী খাতুনের স্বামী আব্দুল মান্নান জানান, সেডের জন্যে ইটের যে পিলার তৈরী করা হয় তা মাটির উপরে। মাটির নিচ থেকে পিলার তোলা না হলে কিভাবে ঘর টিকবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এছাড়াও প্রয়োজনীয় বালু ও সিমেন্ট দেওয়া হয়নি। নিম্নমানের কাজ তাই প্রতিবাদ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১২০ জন পিজি সদস্যর মধ্যে মানিকনগর ও রামনগর গ্রামের সমিতির সদস্যদর বাড়িতে ঘর নির্মান শুরু করে এলডিডিপি প্রকল্পের তানিয়া আখতার ও মিঠুন। তবে নির্মানকাজের নিম্নমানে তারা প্রশ্নবিদ্ধ হন। এক পর্যায়ে প্রতিবাদের মুখে টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। নির্মানাধীন এসব সেডের বাকি কাজ উপকারভোগী নিজেরাই করে নিবেন বলে জানান তানিয়া ও মিঠুন। চলমান কাজ পর্যন্ত খরচের একটি আনুমানিক হিসেবে করে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে উপকারভোগীদেরকে। এতে মাঝপথে টাকা ফেরতের সিদ্ধান্তে সেড নির্মান কাজ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
উপকারভোগীদের অভিযোগ, প্রকৃত ব্যয়ের সাথে খরচের হিসেবের মিল নেই। তাই পকেট থেকে টাকা খরচ করে সেড নির্মান করতে হবে তাদের।
জানতে চাইলে এলডিডিপি প্রকল্পের প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তানিয়া আখতার ও প্রাণি সম্পদ মাঠ সহকারি মিঠুন আলী বলেন, আমাদের বড় স্যারের (জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার) নির্দেশে টাকাগুলো নিয়ে সেড তৈরী করে দেওয়া হচ্ছিলো। সেড নির্মানের অনিয়মের বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি।
তবে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, সমিতির সদস্যরা ডিজাউন অনুযায়ী সেড তৈরী করে না। আবার অনেকেই আছেন যারা নগদ টাকা পেয়ে অন্য কাজে খরচ করে ফেলায় শেষ পর্যন্ত সেড তৈরী করতে পারে না। যা প্রকল্প বাস্তবায়নের একটি প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য প্রকল্পের লোকজনকে ওই টাকা নিয়ে সেড নির্মান করতে বলা হয়েছিল। ঘর নির্মান শেষে যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণি সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) কর্তৃক উপজেলা পর্যায়ে গঠিত প্রডিউসার গ্রুপ (পিজি) এর সদস্যদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট সাপোর্ট এর আওতায় মুরগী ও ছাগলের পরিবেশ বান্ধব সেড (ঘর) নির্মানের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের অর্থ দিয়ে ঘর নির্মানের লক্ষ্যে পিজি সদস্যদের সাথে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সম্পাদন করেন ওই প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। প্রতিটি সেড নির্মানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ হাজার করে টাকা। মুজিবনগর উপজেলার মোট ১২০ জনকে দেওয়া হয় সর্বমোট ২৪ লাখ টাকা।