মুজিবনগর দিবসে এবার বড় আয়োজন ।। চুড়ান্ত প্রস্তুতি
মেহেরপুরের চোখ ডট কম, মুজিবনগর:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা প্রবাহের সাথে যে নামটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তা হল মুজিবনগর সরকার বা প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের নেতৃত্বে ছিল এই সরকার। একাত্তরের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের ঐতিহাসিক বেদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আম্রকাননে এ সরকারের শপথ হয়েছিল। যার মাধ্যমে পাল্টে গিয়েছিল যুদ্ধের গতি প্রকৃতি। সেই দিনটি স্মরণীয় করে রাখা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে এবার জাকজমকপূর্ণ বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপনের প্রস্তুতি চুড়ান্ত পর্যায়ে্।
মুজিবনগরকে বলা হয় স্বাধীনতার সূর্যোদয় ভূমি। যে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল সাত কোটি বাঙালির হৃদয়ে। তাই মুজিবনগর আর স্বাধীনতা এক সুতোয় গাঁথা রয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানালেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সরেজমিন মুজিবনগর কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, বৈদ্যনাথতলা আমবাগানে যেখানে একাত্তরে প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেছিলেন সেখানে শেখ হাসিনা মঞ্চে চলছে সাজ সজ্জার কাজ। এ মঞ্চে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশ নিবেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। দর্শনার্থীদের কাছে মুজিবনগরকে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত স্থাপনাগুলো ধুয়ে মুছে করা হচ্ছে পরিস্কার। প্রবেশ পথগুলোতে রংয়ের আচড় দিয়ে ফুটিয়ে তোলার কাজও শেষ পর্যায়ে। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, আম্রকানন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স পেয়েছে এক নতুন রুপ।
মূলত জেলা প্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিবসটি ঘিরে আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে থাকছে- সকাল ৯ টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন। জাকজমকপূর্ণ কুজকাওয়াজ। এতে অংশ নেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজিবি, পুলিশ, আনছার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউট, গালর্স গাইড এবং ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।
সকাল ১০ টায় গীতিনাট্য সোনালি স্বপ্রের দেশ উপস্থাপন করবে আনছার ও ভিডিপি অর্কেস্ট্রা দল। একাত্তরের শপথের পর গার্ড অব অনার প্রদানকারী হিসেবে ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে আছে ১২ আনছার সদস্যা। স্বাধীনতা যুদ্ধে আনছার সদস্যদের আত্মত্যাগের স্মৃতি সমুন্নতা রাখতে মুজিবনগর দিবসে আনছার ভিডিপির এই কর্মসুচী থাকে প্রতি বছরই।
এদিকে সন্ধ্যা ৬ টায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্রের সামনে আয়োজন করা হযেছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। দেশ বরেণ্য ও প্রশিদ্ধ শিল্পিরা সঙ্গীত পরিবেশেন করবেন এ মঞ্চে। এছাড়াও আতশবাজি উৎসব আর রঙ্গিন আলোর ঝলকানি থাকছে সন্ধ্যার পর থেকে।
এদিকে সকাল দশটায় শেখ হাসিনা মঞ্চে আলোচনার সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন। সঞ্চালনায় থাকবেন আওয়ামেী লীগের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহম্মেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজ্জামেল হকসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন এ আলোচনা সভায়।
আয়োজন সম্পর্কে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ইতিহাসের অত্যান্ত গৌরবময় ঘটনার দিন মুজিবনগর দিবস পালনে এবারও নানা আয়োজন করা হয়েছে। করোনা মহামারীর কারনে দুই বছর অনুষ্ঠান আয়োজনে ছেদ পড়লেও এবার অত্যান্ত জাকজমকতার সাথে হচ্ছে সব আয়োজন। যার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন মেহেরপুরসহ আশেপাশের জেলার মানুষ। অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দিবসটি আয়োজনের সকল প্রস্তুতি প্রায় চুড়ান্ত জানিয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শামীম হাসান বলেন, গরমে মানুষ যাতে কষ্ট না পান তার জন্য পানি পানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া অস্থায়ী টয়লেট, মেডিকেল টিমসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। জাতীয় এ অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে অনুষ্ঠান ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে জেলা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে মেহেরপুর পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হক বলেন, মেটাল ডিকেকটিভ দিয়ে তল্লাশি এবং আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা হয়েছে। পুরো এলাকার নিরাপত্তা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। বাইরের জেলা থেকেও আনা হয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স। এছাড়াও থাকছে র্যাবের কয়েকটি দলের টহল।
স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বাঙালির বিজয়ের গৌরবগাঁথা বীরত্ব মিশে রয়েছে একাত্তরের ১৭ এপ্রিল শপথের মধ্যে। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরও সমুন্নত হবে এমনটাই প্রত্যাশা মেহেরপুরবাসীর।
আরও পড়ুন : একাত্তরের শপথ অনুষ্ঠানের পেছনের কারিগররা উপেক্ষিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস উদযাপনের নির্দেশ