মেহেরপুর জেলায় ডেঙ্গু নিয়ে কার্যকরী উদ্যোগ নেই ?
এম চোখ ডট কম, মেহেরপুর : মেহেরপুর জেলাতেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও মেহেরপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে এ জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকাতে প্রচার প্রচারণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনও দৃশ্যমান নয় । স্থানীয় জনপ্রতিনিদের মধ্যেও নেই আগাম সতর্কতার জন্য পদক্ষেপ। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, মেহেরপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে গাংনী উপজেলায় তিনজনসহ জেলায় ১১ জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে মুন্নী নামের এক সন্তান সম্ভবা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। যারা আক্রান্ত তারা সকলেই ঢাকা থেকে আগত। প্রতি বছর এ সময়টাতে ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা দেয়। আগাম প্রস্তুতি না নেয়া ও প্রচার প্রচারণা না থাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। তেমন কোন সতর্কতাও ছিল না। কোরবানীর ঈদে যারা ঢাকায় গরু বিক্রি করতে গিয়েছিল তাদের মাধ্যমে এ ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ ও সচেতন মহল।
প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে কোন প্রচার প্রচারণাও দেখা যায়নি। দেখা যায়নি মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। শহর কিংবা গ্রাম সব খানেই ঝোপ ঝাড়। নর্দমা অপরিস্কার। এসব স্থান অনেকটাই মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ধরা যায়। স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ আজো কোন প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন না। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ দাবী করেছেন তারা মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
তবে আশার কথা হচ্ছে- মেহেরপুর ও গাংনী পৌরসভা ইতিমধ্যে মশক নিধেনে মাঠে নেমেছে। ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন স্প্রে করার পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে সচেতনতা মূলক কার্যক্রমসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গুর স্বভাব পাল্টেছে। আগে মশা দিনে কামড়াতো। স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়তো। এখন সবখানেই এডিশ মশার বিচরণ। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে হঠাৎ ১০৩/১০৪ জ¦র দেখা দিবে। জ¦র কমে গেলে বা সেরে গেলেও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রয়ে যায়। শুরু হয় পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমি, মাথা ঘোরা, পাতলা পায়খানা, রক্ত বের হওয়া শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যে অনেকেই জ¦র নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে রক্ত পরীক্ষা করার। সেই সাথে স্বাস্থ্য সচেনতার কথাও বলা হচ্ছে। মশারী ব্যবহার করারও পরামর্শ দেয়া হয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ডেঙ্গু ক্লাসিক্যাল হোক আর হেমোরেজিক হোক, এই সময় জ্বর হলে শুরুতেই পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিৎ। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা বেশি ঝুঁকিতে পরতে পারে, তাই জ্বর হলেই সতর্ক থাকতে হবে।
গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী জানান, ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ফগার মেশিন দিয়ে মশা মারার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে জনবল স্বল্পতার কারণে একটু গতি মন্থর। তেতুঁলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ^াস জানান, ডেঙ্গু ভয়াবহতা জানার পর তা নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক জমির মোহাম্মদ হাসিবুর সাত্তার জানান, গেল সপ্তাহে একজন এ পর্যন্ত ৮ জন আক্রান্ত হবার খবর মিলেছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কীট, আলাদা ওয়ার্ডসহ সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবখানে প্রচার প্রচারণা চালানো প্রয়োজন যাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ না হয়। সেক্ষেত্রে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা ও নর্দমাতে নোংরা পানি বা জলাবদ্ধতা না থাকে তার ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ খালেক জানান, উপজেলা পরিষদ থেকে সতর্কতার জন্য ও প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সব সময় জনগনের কল্যাণে নিয়োজিত।