মেহেরপুর-১ তাহলে কী দ্বিমুখী লড়াই হতে যাচ্ছে ?
এম চোখ ডটকম,মেহেরপুর: তফশীল ঘোষণার বেশ আগে থেকেই মেহেরপুর-১ আসনে বর্তমান এমপি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় সে চিত্রটা কিছুটা পাল্টে যায়। ওই গ্রæপের মধ্য থেকে চার জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী বিরোধী গ্রæপের অন্যতম প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ফলে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফরহাদ হোসেন এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন ভোটাররা। মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-১ আসন। এ আসনটিতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন। দলীয় কমটি গঠন ও দলীয় কর্মকাÐে স্বজনপ্রীতি এবং দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নসহ নানা অভিযোগে দলের একাংশের মনোনয়নপত্যাশী এক ডজন নেতা জোটবদ্ধ হন তার বিরুদ্ধে। তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন- ফরহাদ হোসেন বাদে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই ভোট করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরহাদ হোসেন তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। তখন ওই অংশের নেতারা তাদের মধ্য থেকে একজন প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধের ঘোষণা দেন। জানা গেছে, একসাথে কয়েকটি জনসভা করে ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোয়পত্র দাখিল করেন তাদের পক্ষের চার জন। এরা হলেন- সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাড. মিয়াজান আলী ও অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন। নেতাকর্মী সুত্রে জানা গেছে, ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ সাবেক এমপি আব্দুল মান্নানকে একক প্রার্থী রাখার পক্ষে মতামত দেন। অ্যাড. মিয়াজান আলী ও অ্যাড. ইয়ারুল ইসলামকেও একক প্রার্থী করার দাবি ওঠে। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ে অ্যাড. মিয়াজান আলী ও অ্যাড. ইয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এতে আব্দুল মান্নানের একক প্রার্থী হওয়ার পথ কিছুটা সুগম হয়। কিন্তু রির্টার্নিং অফিসারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম ইসিতে আপিল করলে নেতাকর্মীদের কপালে আবারও চিন্তার ভাজ পড়ে। তাদের মধ্য বিভক্তির আশংকা সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, জেলা রির্টার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। ১৪ ডিসেম্বর আপিল শুনানিতে রির্টার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে ইসি। ফলে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম। অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম সাকেব ছাত্রনেতা। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ২০১৯ সালের নির্বাচনে। এবারের সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে তিনি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেন। এর আগে তিনি ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দীতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফরহাদ হোসেনের কাছে পরাজিত হন। নেতাকর্মীরা জানান, যেহেতু মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানের পক্ষে রয়েছেন। সেক্ষেত্রে সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী থেকেই যান তাহলেও তেমন প্রভাব পড়বে না। ফলে নৌকা প্রার্থীর সাথেই স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানের ভোট লড়াই হবে। দ্বিমুখী এ ভোটযুদ্ধে ভোটাররা কার পক্ষে রায় দেবেন তার জন্য তো ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়পত্র প্রত্যাহারে শেষ দিন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীনের অবস্থান কি হয় তার জন্যও দুই দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মেহেরপুর-১ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৭। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৮১ জন এবং পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৬।