মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে চমক ।। তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল গণি
এম চোখ ডট কম, গাংনী:
গেল কয়েকদিন ধরে গাংনীতে নানা গুঞ্জন চলছিল। এক সময়ের বিএনপির তুমুল জনপ্রিয় সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন। আবার কখনও আলোচনা চলছিল তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই জীবনের শেষ ভোটের লড়াই করবেন। বিএনপিতে ফেরার আলোচনাও ছিল বেশ জোরোসোরে। অবশেষে তিনি তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। আব্দুল গণির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর মেহেরপুর-২ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিএনপির হয়ে তিন তিনবার এ আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আব্দুল গণি। ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন এবং ২০০১ সালে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে জয়লাভ করে এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে তার জন্য এখনও আক্ষেপ করেন। তার বলিষ্ট নেতৃত্ব ও নেতাকর্মী বান্ধব অবস্থান ছিল খুবই স্পষ্ট। ফলে দলের দুঃসময়ে এখানকার নেতাকর্মীরা বারবারই তার নামটি উচ্চারণ করেছেন।
ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা নতুন দল গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাদেরকে বলা হতো সংস্কারপন্থী। সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে বিএনপি থেকে ছিটকে পড়েছিলেন বিএনপির এই হেডিওয়েট নেতা। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দলে ফেরার চেষ্টাও করছিলেন। এলাকার নেতাকর্মীদের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে বারবারই প্রচেষ্টা ছিল দলে ফেরার। কিন্তু সে সুযোগ সৃষ্টি করেনি বিএনপি।
বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুল গণির সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি বলেন, বিএনপিতে প্রত্যাবর্তন করার জন্য ছয় মাস আগে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোন রেসপন্স মেলেনি। তবুও অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু মাঠের কিছু লোকজন অনেক বিপদে রয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। দলের নেতাকর্মীই যদি না থাকে তাহলে দল কিভাবে থাকে ? অন্তত তাদের মাথার উপর একটি ছাতার ব্যবস্থা করতেই তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপিতে আমার মত যারা বয়োজ্যোষ্ট আছেন তাদের হয়তো নির্বাচন করার মত বয়স এবারই শেষ হবে। আর হয়তো নির্বাচন করা হবে না। যদি বিএনপিতে আমাদের নিত তাহলে হয়তো একসাথে দলের মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেই পথ বন্ধ।
এলাকার মানুষের ব্যাপক সাড়া রয়েছে উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি বলেন, তৃণমূল বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের সাথে আমার খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। একটি কর্মীবান্ধব, জনবান্ধব দল হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং নিপিড়িত নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমার এখন মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে আব্দুল গণির গাংনীতে ফেরার ঘোষণায় রাজনীতির অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিছেন অনেকে। আব্দুল গণির জনপ্রিয়তাই ভোটের মাঠের চিত্র পাল্টে যাবে। এখনও তার ব্যক্তিগত ভোটব্যাংক রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এই ভোট ব্যাংক পাল্টে দিতে পারে ভোটের ফলাফল। তিন তিনবারের সাবেক এই এমপি একজন দক্ষ ও চৌকস রাজনৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। ফলে তার নির্বাচনে আসা সুষ্টু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি প্রতিদ্বন্দীতাপূর্ণ উৎসব মুখর নির্বাচনের আশা দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।