শিক্ষা অফিসারের সাথে প্রধান শিক্ষকদের জোগসাজস ॥ গাংনীর দুটি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র নির্মান কাজে অনিয়ম
এম চোখ ডট কম, গাংনী:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া ও মুন্দা অলিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে জোগসাজসে প্রধান শিক্ষকদ্বয় নামকাওয়াস্তে কাজ করে দুটি বিদ্যালয়ের ৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন। তবেস কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে দাখিল করা খরচের ভাউচারের সাথে বাস্তবত কাজের কোন মিল নেই।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন জানান, ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ হিসেবে বিদ্যালয় দুটিতে দুই লাখ করে চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা কাজ শেষে ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যালয় দুটির চার লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোড়পুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খরচের খাতে দেখানো হয়েছে ৮টি চেয়ার ও ৮টি টেবিল ক্রয়, ড্রেন নির্মানের জন্য নির্মান সামগ্রী ক্রয়, পানির লাইন ড্রেন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, জোড়পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পুরাতন টিনের ঘরের প্রায় অর্ধেকাংশ ভাঙ্গা হয়েছে। যার মূল্যবান সেগুন কাঠ ও পুরাতন মজবুত টিনের কোন হদিস নেই। এই ঘর ভাঙ্গা ইট দিয়ে নির্মান করা হয়েছে গেটের দুই পাশে সামান্য পরিমাণ ড্রেন। ঘর ভাঙ্গার ইট ও মূল্যবান সেগুন কাঠ কোথায় আছে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের একজন একটি কক্ষ খুলে দেখান। তবে সেখানে যা আছে তা ঘর ভাঙ্গা থেকে পাওয়ার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে চেয়ার ও টেবিল ক্রয় করা হয়েছে তার বিল ভাউচারের সাথে অমিল। নিম্নমানের চেয়ার টেবিল কিনে বেশি পরিমাণ টাকার অংশ বসিয়ে ভাইচার সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্যদিকে ড্রেন নির্মান সামগ্রী কেনার যে ভাউচার দেখানো হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে তার হদিস মেলেনি। তবে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে অলিনগর মুন্দা প্রাথমিকি বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই। বিদ্যালয়ে গিয়ে কোন এইচবিবি রাস্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিল ভাউচারে যে ইট, মিস্ত্রি খরচ, লোকাল বালি দেখানো হয়েছে তা ভূয়া বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বামন্দীর বিশ^াস এন্টারপ্রাইজের দোকানের যে ভাইচারে ইট কেনা দেখানো হয়েছে সেই ভাউচার অত্র প্রতিষ্ঠানের নয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কোন সামগ্রী আমরা ওই স্কুলে বিক্রি করিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাংনীর মা মেশিনারীজের ভাইচারে কেনা হয়েছে রং ও পিভিসি পাইপ। তবে এ ভাইচারের সাথে মা মেশিনারীজের কোন সম্পর্ক নেই বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।
এছাড়াও যে স্মার্ট এলইডি নোটিশ বোর্ড কেনা হয়েছে তার ভাইচারের দামের সাথে পণ্যের মূল্য অসামঞ্জস্য।
বিদ্যালয়টি সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে প্রধান শিক্ষককের পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয় থেকে জানানো হয় তিনি উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ফুটবল খেলার কাছে আছে। তবে প্রধান শিক্ষকের এ অনুপস্থিতির বিষয়ে বিদ্যালয়ের মুভমেন্ট রেজিস্ট্রারে কোন তথ্যই মেলেনি। নতুন হেয়ারিং রাস্তা নির্মান করা হয়েছে বলে দুই জন সহকারি শিক্ষক দাবি করলেও বাস্তবে দেখাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তবে দুই দিন আগে একটি ওয়াটার ফিল্টার আনা হয়েছে বলে দেখান তারা। তবে এই ওয়াটার ফিল্টারের সাথে ভাউচারে উল্লেখিত দর অসামঞ্জস্য।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক দাবি করেছেন, ভাউচারে উল্লেখিত সব খরচ সঠিক। বিদ্যালয়ে ভবন নির্মান হচ্ছে তাই ঠিকাদারের অনুরোধে রাস্তা নির্মান করা হয়নি। রাস্তার টাকা আছে পরবর্তীতে নির্মান করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দীন এ অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের একাউন্টে টাকা না দিয়ে তিনি বেশ কিছুদিন টাকা রেখে তারপরে পরিশোধ করেছেন। নানা অনিয়ম আর আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিনি এ কাজের বিল পরিশোধ করেছেন। তার বেশ প্রশ্নবিদ্ধ।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দীন বলেন, বিষয়টির সাথে তিনি জড়িত নন।
আরও পড়ুন : বারাদী ক্যাম্পের বিশেষ অভিযানে হেরোইনসহ ১ জন গ্রেফতার দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোয় ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত