শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে মেহেরপুর বারাদীর ঐতিহ্যবাহী ছাগলের হাট
হামিদুল ইসলাম বারাদী : ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে মেহেরপুর সদরের বারাদী বাজারের ঐতিহ্যবাহী ছাগলের হাট। বিশ্বখ্যাত ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের ছাগলের খোঁজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন জেলার এই ঐতিহ্যবাহী হাটে। শুধু ব্ল্যাকবেঙ্গলই না, এবার হাটে উঠেছে রাম ও যমুনাপাড়ি জাতের বড় বড় ছাগল। শনিবার হাটে আগত ক্রেতাদের নজর কেড়েছে ৮০ কেজি ওজনের কালা মানিক (যমুনাপাড়ি জাত) ও ৬০ কেজির চিত্রা (রাম জাত) ছাগল। সপ্তাহের শনি ও বুধবার এই দুদিন বারাদীতে বসে ছাগলের হাট। দুইদিনে প্রায় দেড় কোটি টাকার লেনদেন হয় হাটে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন ঐতিহ্যবাহী বারাদী ছাগলের হাটে। ঢাকাতে কালো আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে লাল রংয়ের ছাগলের চাহিদা বেশি। ৮ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ছাগল উঠেছে এদিনের হাটে । তবে মাঝারি ধরনের ছাগলের ক্রেতা বেশি থাকে বলে এসব ছাগলের দাম একটু বেশি। বড় ও দৃষ্টিনন্দন ছাগলের ক্রেতাও রয়েছে বেশ। ব্যবসায়ীরা ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে আসছেন কোরবানির ছাগল কিনতে। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় খুশি ক্রেতারাও। ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী আব্দুর রেজা জানান, কোরবানির সময় এ অঞ্চলের হাটে প্রচুর ছাগল আমদানি হয়। আমরাও এখানে আসি ছাগল কিনতে। এখানে সারা বছরই ছাগল পাওয়া যায়। তবে ঈদের আগে ভালোমানের ছাগলের সমারোহ থাকে। সদর উপজেলার বলিয়ারপুর গ্রামের ছাগল ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, হাটে সব ধরনের খাসি উঠছে। দাম ৭-৮ হাজার টাকা থেকে ১ লাখেরও বেশি দামের ছাগল উঠেছে হাটে। এবছরে ছাগলের আমদানি গতবছরের তুলনায় দ্বিগুণ । দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। বাইরে থেকে ব্যাপারি আসলে দাম বেড়ে যায়। হাটে পর্যাপ্ত ছাগল থাকায় নিজেদের পছন্দমত ছাগল কিনতে পারছেন ক্রেতারা। ছাগল কিনতে আসা ক্রেতা হাসান আলী জানান, ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের ছাগল কিনতে এসেছিলাম। বাজেট বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা দামের ১৭-১৮ কেজির একটি ছাগল কিনেছি। সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের স্থানীয় ছাগল ব্যাবসায়ী মোমিনুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরসহ আশপাশ এলাকার সবচাইতে বড় ছাগলের হাট বারাদি হাট। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর পরিমাণ ছাগল আমদানি হয় এই হাটে। আমরা গ্রাম এলাকা থেকে ছাগল কিনে এই হাটে বাইরের ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করি। অনেকে কোরবানির জন্যও কিনে নিয়ে যায়। ঈদের সময় একটু বাড়তি আয়ের জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলে জোর দিয়ে ব্যাবসা করি। এ বছর অন্যবারের মত ব্যাবসা হচ্ছে না। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। দেখা যাক কোরবানির আগ পর্যন্ত কী হয়। বারাদি হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম জানান, এখন প্রতি হাটে ৮ থেকে ১০ হাজার ছাগল আমদানি হচ্ছে। জেলা ও জেলার বাইরের ব্যাপারীরা আসছেন তুলনামূলক সস্তায় ছাগল কিনতে পারছেন। বেচা-কেনাও বেশি। প্রতি হাটে ৭০-৮০ লাখ টাকার কেনাবেচা হচ্ছে। কোরবানির আরো কিছুদিন বাকি আছে। আশা করছি বেচাকেনা কোটি টাকা ছাড়াবে। তাছাড়া বাহির থেকে আগত ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে ওজন পরিমাপক যন্ত্র এবং ভেটেনারী মেডিকেল ক্যাম্প। ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া ও গাড়লও উঠেছে হাটে। ৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ল পাওয়া যাচ্ছে হাটে। বয়বসায়ীদের দাবি প্রতি হাটে ২৫-৩০ টি ভেড়া বিক্রি হচ্ছে। ভেড়া ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া ও গাড়লেরও বেশ চাহিদা আছে। মাঝারি ১৮-২০ কেজি ওজনের ভেড়ার চাহিদা বেশি। মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, এবার জেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার কোরবানি যোগ্য ছাগল ও ২ হাজার ৭ শ ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। তবে জেলায় এবার ছাগলের চাহিদা ৮৯ হাজার। অতিরিক্ত ছাগল জেলার বাইরের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। বারাদী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বারাদী হাটে ব্যাপক ছাগলের আমদানি হচ্ছে সেই সাথে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন ছাগল কেনার জন্য। হাটের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।