সুস্বাদের হিমসাগর সংগ্রহ শুরু ॥ মেহেরপুর জেলায় ১০৪ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা
এম চোখ ডট কম, ডেস্ক:
মেহেরপুর জেলায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে হিমসাগর আম সংগ্রহ। দেশ ছাড়াও বিশে^র বিভিন্ন দেশে খ্যাতি রয়েছে এই হিম সাগর আমের। মেহেরপুর জেলায় চলতি মৌসূমে ৩৭ হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য ১০৪ কোটি টাকার উপরে। এবার আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় গেল কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে লাভের আশা করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
আবহাওয়ার অবস্থা বিবেচনায় ২৫ মে থেকে হিম সাগর আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসন। ব্যবসায়ীরা তাই আজ সকাল থেকে শুরু করেছেন আম সংগ্রহের কাজ। আম বাগানগুলোতে অনেকটাই উৎসব মুখর পরিবেশে আম সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। গাছ থেকে আম পেড়ে তা বিভিন্ন শ্রেণিতে বাছাই করে বন্দি করা হচ্ছে প্লাস্টিকের ক্যারটে। যন্তসহকারে ক্যারেটবন্দী করা আমগুলো পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে।
গেল মৌসূমের চেয়ে এবার আমের দাম কিছুটা পড়তির দিকে। তবে ফলন কয়েকগুন বেশি হওয়ায় লাভের আশা করছেন ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা। তাছাড়াও ঢাকা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে মেহেরপুরের হিমসাগর আমের আলাদা কদর থাকায় অন্য জেলার আমের চেয়ে বেশি দরেই বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে এই সুস্বাদের হিমসাগর।
আম ব্যবসায়ী আযান গ্রামের হাসানুজ্জামান জানান, চলতি মৌসূমে প্রচণ্ড তাপদাহে আম নিয়ে বিপাকে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। আমের আকার অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা ছোট হয়েছে। তবে এবার যে ফলন হয়েছে তা অন্য যেকোন বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের এবার বেশি লাভ হবে।
আম ব্যবসায়ী আযান গ্রামের রমিক হাসান জানান, বিষমুক্ত নিরাপদ এবং ভিন্ন স্বাদের কারনে মেহেরপুর জেলার হিম সাগর আমের বাড়তি কদর রয়েছে আমের বাজারে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও বরিশালে মেহেরপুর জেলার হিম সাগর বেশি চলে। বাগান থেকে পরম যন্তে আম সংগ্রহ করে তা নিরাপদ উপায়ে বহন করে ঢাকা ও বরিশালে পাঠানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন :
হিমসাগর কেন বিখ্যাত জানতে জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন
এদিকে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ নিরাপদ আম বাজারজাত করার লক্ষ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে নির্ধারিত সময়ের আগে আম সংগ্রহ না করা, বাগান পরিদর্শন ও আম বহনের যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। আম পাকার নির্ধরিত সময়ের আগে কেউ গাছ থেকে আম পাড়লে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজল ইসলাম।তিনি বলেন, হিম সাগর হচ্ছে মেহেরপুর জেলার ব্যান্ডিং। সুস্বাদের এই আম দেশ ছাড়াও বিদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, এর আগে আটি ও বোম্বাই আম সংগ্রহ শুরু হয় ১৫ থেকে, গোপালভোগ ১৮ মে আর হিমসাগর ২৫ মে থেকে। অন্যান্য আমের মধ্যে ল্যাংড়া ২৮ মে, আম্রপালি ৫ জুন, মল্লিকা ১০ জুন, ফজলী ২০ জুন এবং বিশ্বনাথ, আশ্বিনা ও বারি আম ৪ সংগ্রহের সময় নির্ধারিত হয়েছে ১৫ জুলা থেকে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে গাংনী উপজেলার আযান গ্রামে আম বাগান পরিদর্শন করেন গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মেহেরপুরের বিখ্যাত হিমসাগরসহ অন্যান্য আম নিরাপদ আম হিসেবে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে কৃষি বিভাগ। ভোক্তারা যাতে নিরাপদ আম পান সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার দুই হাজার ৩শ ৪০ হেক্টর জমিতে আমের বাগন রয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর আম রয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমিতে। মোট বাগান থেকে ৩৭ হাজার ৭শ ৮৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুৃন : চুয়াডাঙ্গার বাজারে উঠেছে সুস্বাদু হিমসাগর আম মেহেরপুর জেলায় ১৫ মে থেকে আম সংগ্রহ শুরু