হারয়ে বেগুন তোমার কী গুন ?
-মাজেদুল হক মানিক
সমালোচনা করব কিন্তু যৌক্তিকতার স্পর্শ থাকতে হবে। আজকের এই লেখা একজন কৃষক হিসেবে। কেন লিখছি ? কারণ সবজির দর বৃদ্ধি পেলে যেমনি আমরা চেঁচামেচি করি তেমনি দাম কমলে কৃষকের দুরাবস্থা নিয়ে তেমন কেউ কথা বলে না।
রমজানে বেগুনের প্রতি সবার নজর একটু বেশি-ই ছিল। কেননা অন্যান্য রোজায় বেগুন ছিল আলোচনার শীর্ষে। এবার প্রথম রোজার দিনে মেহেরপুর জেলার হাট বাজারগুলোতে প্রতি কেজি বেগুন খুচরা পর্যায়ে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে কিনতে পারার সৌভাগ্য ছিল ক্রেতাদের। সেই বেগুনের দর কিন্তু এখন আরও পড়তির দিকে। গেল দুদিন হাট বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখেছি প্রতি কেজি বেগুন ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুরুতে বলেছি আজকের লেখাটি একজন কৃষক হিসেবে। একটু ভাবুন তো ১০-১৫ টাকা কেজি দরে যদি বেগুন বিক্রি হয় তাহলে যে কৃষক ঘাম ঝরিয়ে বেগুন উৎপাদন করে আমাদের খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন তার অবস্থা কী ? তারা কত টাকা কেজিতে পাচ্ছেন ? নিশ্চয় ৫-৭ টাকার বেশি নয়। চড়া শ্রমিক খরচের এই সময়ে বেগুন তুলতেই যে খরচ হচ্ছে সেই টাকা বেগুন বিক্রি করে পোষানো দায় হয়ে পড়েছে।
এখন আপনি বলবেন যে, কৃষক তো এর আগে অনেক বেশি দরে বেগুন বিক্রি করেছে। এখন বেগুনের মৌসূম শেষের দিকে দাম কমবে এটা স্বাভাবিক। ঠিক আছে; আমার প্রশ্ন হচ্ছে- এক বিঘা জমিতে কত মণ বেগুন পাওয়া যায় ? মোট উৎপাদিত বেগুনের কতভাগ বেশি দরে বিক্রি হয় আর কতভাগ কম দামে বিক্রি হয় ? এমন প্রশ্নের উত্তর যদি একজায়গায় করা যায় তাহলে দেখবেন কৃষকের লাভ তেমন নয়।
তাহলে বেগুনের দর কেন আকাশচুম্বি হয় ? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। আমার জানামতে আমাদের বাজার ব্যবস্থা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি যেমনি নিয়ন্ত্রণহীন তেমনি দাম কমলে কতটা কমবে আর কৃষকের উৎপাদিত ফসল কোথায় ফেলা হবে তার জন্য কোন নীতিমালা কিংবা নীতি নির্ধারকদের মাথা ব্যাথা নেই। এটাই হচ্ছে মূল সমস্যা।
বলা যেতে পারে- বাজারের অব্যবস্থাপনার বলি হয় আমাদের বেগুন চাষীরা কিংবা অন্যান্য ফসল উৎপাদানকারী চাষীরা।
এখন আসি বাজারে ২৯টি নিত্যপণ্যের দর বেধে দেওয়ার বিষয়ে। এ দর নির্ধারণ যেমনি আশাব্যঞ্জক তেমনি হতাশার অনেক বিষয় আছে। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের যে দর দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই যোক্তিক। কিন্তু দর কমে গেলে এই পণ্যগুলোর দর কি হবে তা স্পষ্ট নয়। বাড়তি দরের লাগাম টানতে যেমনি দর বেধে দেওয়া হয়েছে ঠিক তার বিপরিতে দাম পড়ে গেলে কৃষকের স্বার্থগত বিষয় এখানে দেখা হয়নি। তাই এই দর নির্ধারণ ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের জন্য আশির্বাদ না অভিশাপ তা সময়ই বলে দেবে।
আরেকটি বিষয় আলোচনাযোগ্য। তা হচ্ছে- ফসলের দর নির্ধারনের সাথে যৌক্তিকভাবে উৎপাদন উপকরণের দাম নির্ধারণ করা জরুরী। একই সাথে কৃষি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজীর যে অভিযোগ রয়েছে তার প্রতিকার করতে হবে।
তবে আশার কথা হচ্ছে এতদিন পরে যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। সব পর্যায়ে সুষ্ঠু বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হলে অবশ্যই কৃষক ও ক্রেতা-ভোক্তা উভয়েল জন্য বিষয়টি আশির্বাদ হবে।