গাংনীতে ৩২০ বস্তা ক্যাটল ফিড জব্দ ॥ কারখানা সীলগালা
মেহেরপুরের চোখ ডট কম, গাংনী:
মেহেরপুর গাংনীর ইকুড়ি এইচবি ক্যাটল ফিড মিলে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় বিভিন্ন কোম্পানীর ৩২০ বস্তা ক্যাটল ফিড জব্দ করা হয়। একই সাথে কারখানাটি সীলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে গেছে কারখানার মালিক হযরত আলী।
সোমবার (১৬ মে) দুপুরে গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল এ অভিযান পরিচালনা করেন।
ভ্রাম্যমাণ সুত্রে জানা গেছে, এইচ বি ক্যাটল ফিড মিলে অবৈধভাবে পোলট্রি খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। কারখানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ক্যাটল ফিড তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানীর বস্তা রয়েছে। এই খাবার তৈরী এবং কারখানা স্থাপনের বিষয়ে আইনগত বৈধতা দেখতে চান ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে কারখানায় কর্মরত যারা ছিলেন তারা মালিকের দোহাই দেন। মালিক উপস্থিত না থাকায় তারা কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না বলে দাবি করেন করেন।
এদিকে অভিযানের কিছুক্ষণ আগেই কারখানা থেকে মালিক হযরত আলী পালিয়ে যায়। অভিযানের খবর সে আগেই পেয়েছিল বলে ধারণা করছেন অভিযান দলের সাথে থাকা কয়েকজন।
অভিযান সুত্রে জানা গেছে, একই কারখানায় বিভিন্ন কোম্পানীর ফিড পাওয়া যায় যা সম্পুর্ণ আইন পরিপন্থি। বিধায় ৩২০ বস্তা ক্যাটল ফিড জব্দ করা হয়। এ সময় কারখানাটি সীলগালা করা হয়েছে। কারাখানা মালিককে তলব করা হয়েছে সহকারি কমিশনারের কার্যালয়ে।
অভিযানের সহযোগিতা করেন গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দীন ও গাংনী থানা পুলিশের একটি টীম।
এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম নাজমুল আলম বলেন, কারখানা স্থাপন, ফিড তৈরী ও অন্যান্য বিষয়ে আইনগত কাগজপত্রাদি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কোন দপ্তর থেকে সে অনুমোদন নিয়েছে না কি অনুমোদনভাবেই পরিচালনা করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। আইনগত ভিত্তির বিষয়টি স্পষ্ঠ না হলে কারখানা চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না।
একই কারখানায় বিভিন্ন কোম্পানীর ফিডের বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম তো হতে পারে না। কারখানায় যদি তৈরী হয় তাহলে কোন নির্দিষ্ট একটি ব্যান্ড তৈরী হতে পারে। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানীর পণ্য কিভাবে আসলো তা খতিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, মেহেরপুর জেলায় প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশু পালন করা হয়। ভারতীয় গরু আসা বন্ধের পর থেকেই মেহেরপুর জেলায় শুরু হয় গরু মোটাতাজাকরণ। জেলার অনেক বাড়ি যেন একেকটি গো খামার। বিশেষ করে গ্রামের কৃষক পরিবারে গরু, ছাগল ও ভেড়া পালন করা হয়। গবাদি পশু পালনে অনেক পরিবার দারিদ্রতা জয় করে আর্থিক স্বাবলম্বী পরিবারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে গবাদি পশু পালনের পরিমাণ। কৃষি পরিবারে দু’য়েকটি গরু পালন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে জেলায় গো খামার গড়ে উঠছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে গো খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছরই তৈরী হচ্ছে নতুন রেকর্ড।
আরও পড়ুন ঢাকার টানে মেহেরপুরে কোরবানির গরুর বাজার চড়া
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার খামারী ও কৃষকরা কোরবানির ঈদ লক্ষ্য করেই গরু পালন করেন। অতি যন্ত্বে লালিত এসব গরু লাভজনক দামে কোরবানির পশু বাজারে বিক্রি করা হয়। এতে গবাদি পশু পালনকারীরা বেশ লাভবান হয়ে থাকে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গরু পালন বৃদ্ধির ফলে মেহেরপুর জেলায় ক্যাটল ফিডের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। খামারের পাশাপাশি বাড়িতে পালিত গরুর জন্যও ফিড প্রয়োজন। গরু পালনে লাভের আশায় পালনকারীরা এই ফিডের উপর বেশ নির্ভরশীল। এতে স্থানীয়ভাবে ফিড মিল কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়েছেন অনেকে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, মানসম্মত ক্যাটল ফিড নিশ্চিত করতে পারলেই প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাংস উৎপাদন সম্ভব। জেলার সম্ভাবনাময় এই খাতকে ঘিরে অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। তাই অতি প্রয়োজনীয় এবং বিপুল চাহিদার বিষয়টি কাজে লাগিয়ে অসাধু পন্থা অবলম্বন স্বাভাবিক। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। গবাদিপশু পালন কৃষি খাতকে আরও সম্মৃদ্ধ করবে বলে মনে করেন প্রাণী সম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা।
আরও খবর