গাংনীর আনারুলের কাছ থেকে সুদের টাকা নিয়ে নি:স্ব কয়েকটি পরিবার
এম চোখ ডটকম,গাংনী: গাংনীর আলোচিত সুদ ব্যবসায়ী আনারুলের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছেন কয়েকটি পরিবার। সুদের টাকার বদলে একজনের শেষ সম্বল জমি লিখে নেওয়া এবং অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে চেক ও সই করা শাদা স্ট্যাম্প আটকে রেখে চড়া সুদ আদায় করা হচ্ছে। পেশিশক্তি দিয়ে বহাল তবিয়তেই সুদ কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন আনারুল ইসলাম। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সুদ কারবারে কুখ্যাতি পাওয়া আনারুল ইসলামের বেশ কয়েকটি কারবার। জানা গেছে, গাংনী উত্তরপাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের উপকেন্দ্রের (সাব স্টেশন) পশ্চিম দিয়ে পাঁচতলা আলিশান বাড়ির মালিক হয়েছেন আনারুল ইসলাম। গেল ১১ মার্চ সন্ধ্যায় গাংনী থানার এক যুগান্তকারী অভিযানে উত্তরপাড়ার আরেক সুদ কারবারী আবু হানিফের সাথে গ্রেফতার হয় আনারুল ইসলাম। বেশ কিছুদিন হাজতবাসের পর তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এরই মাঝে আনারুল ইসলামসহ উত্তরপাড়ার কুখ্যাত সুদ কারবারীদের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। এতোদিন সুদ কারবারীদের দাপটে মুখ বুজে চড়া সুদ দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। সুদ কারবার নিয়ে তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গাংনী উত্তরপাড়া ও পশ্চিম মালসাদহসহ পৌর এলাকার কয়েকজন বড় সুদ ব্যবসায়ীর তথ্য। যাদেরকে মানুষ উত্তরা ব্যাংক হিসেবে চেনে। যাদের হেফাজতের রয়েছে শত শত ব্যাংক চেক ও সই করা শাদা স্ট্যাম্প। যা পুঁজি করে দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে চড়া সুদ আদায় করে থাকে এসব কুখ্যাতি পাওয়া সুদ কারবারীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি ভোমরদহ গ্রামের ভুক্তভোগী দুই নারী সুদ কারবারী আনারুল ইসলামের নামে গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। বিপদগ্রস্থ হয়ে আনারুলের কাছ থেকে সুদে টাকা নেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার টাকা দিয়েও তাদের সুদের টাকা পরিশোধ হয়নি মর্মে জানায় আনারুল ইসলাম। অথচ সুদ টানতে গিয়ে তারা নিঃস্ব হতে বসেছেন। সংসারে প্রতিনিয়ত অশান্তিতে ভুগছেন তারা। মুক্তি পেতে আনারুলকে অনুরোধ জানান তারা। কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়ায় টাকা নেওয়ার সময় গ্যারান্টি হিসেবে দেওয়া সই কারা শাদা স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক। টাকা না দিলে এই চেক ডিজঅনার মামলা করার হুমকি দেয় আনারুল ইসলাম। তাই প্রতিকার পেতে গাংনী থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। আনারুলের কাছে এরকম অসংখ্য ভুক্তভোগীর চেক ও স্ট্যাম্প রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অভিযোগ তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হলেই জানা যাবে আসল ঘটনা। এদিকে গত বুধবার (০৬ মার্চ) তথ্যনুসন্ধানে গেলে গাংনী উত্তরপাড়ার অনেকে সুদ কারবারী আনারুলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে উত্তরপাড়ার প্রবীন এক ব্যক্তি সলিম উদ্দীন বলেন, উত্তরপাড়ার সুদ কারবারী আনারুল ইসলামের কাছ থেকে অল্প কিছু টাকা নেন ভূষি মাল ব্যবসায়ী মোমিন। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সুদে আসল মিলে আরও সুদ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গাংনী উত্তরপাড়ায় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের সাথে মেইন পজিশনের একটি জমি স্ট্যাম্প করে নিয়ে নেয় আনারুল ইসলাম। ওই জমির বর্তমান বাজারমূল্য কোটি টাকার উপরে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভিরুল ইসলাম উজ্জল বলেন, ভুক্তভোগী দুই মহিলা আনারুলের কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য কয়েকদিন ধরে উত্তরপাড়ার বিভিন্ন মহলে ঘুরছিলেন। স্থানীয় লোকজন আনারুলকে চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত দিতে অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আনারুল থানায় গিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের নামে নানা অভিযোগ তুলে মিথ্যা অভিযোগ দেয়। আনারুল সুদ কারবার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে অভিযোগ করে তানভিরুল ইসলাম উজ্জল আরও বলেন, সুদ কারবারী আনারুলসহ উত্তরপাড়ার যারা এই অবৈধ ব্যবসা করে তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। তাছাড়া এদের পাওয়ার অনেক বেশি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুদ কারবারী আনারুল ইসলামের দৃশ্যমান তেমন কোন ব্যবসা নেই। গেল কয়েক বছরের মধ্যে সে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। তার ছয়তলা আলিশান বাড়ি সম্পদের পাহাড়ের দিকেই ইঙ্গিত দেয়। স্থানীয়রা জানান, আনারুল ইসলামসহ বড় বড় কয়েকজন সুদ ব্যবসায়ীরা চলাফেরা একই সুতোয় গাঁথা। তাদের এই অবৈধ ব্যবসা সামলানোর জন্য ক্ষমতার ছত্রছায়া প্রয়োজন। তাই যাদের দিয়ে কাজ হাসিল হয় তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। অপরদিকে যারা তদের কাছ থেকে সুদের টাকা নেয় তারা আর্থিকভাবে দুর্বল নয়তো মান সম্মানের ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করতে চান না। এছাড়াও সই করা ব্যাংক চেক ও সই করা শাদা স্ট্যাম্প তাদের হেফাজতে থাকে। ফলে টাকা নিয়ে কেউ নিঃস্ব হলেও চেক ও স্ট্যাম্প ফাঁদে মামলায় পড়ার ভয়ে তারা প্রতিবাদ করতে পারেন না। এ সুযোগে গেল ১৫/২০ বছর ধরে নিবিঘ্নে তারা অবৈধ সুদ কারবারের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ১১ মার্চের পুলিশের অভিযানে সুদ কারবারী আনারুল ও আবু হানিফ গ্রেফতার হয় এবং তাদের হেফাজত থেকে তিন শতাধিক সই করা ব্লাঙ্ক চেক, দেড় শতাধিক সেট সাদা স্ট্যাম্প ও সুদ কারবারের হিসেবে খাতা উদ্ধার করে পুলিশ। যার মধ্য দিয়ে সুদ কারবারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ আবারও আলোচনায় স্থান পায়। এমন আরও অভিযানের মধ্য দিয়ে অন্যান্য সুদ কারবারীরা আইনের আওতায় আসবে এমন প্রত্যাশা ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের।