ওয়েবিনারে বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার ৬ বছরেও তামাক কর নীতি প্রণয়ন হয়নি
তৌহিদ উদ দৌলা রেজা :
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়া স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পুর্ণভাবে নির্মুল করার প্রতিশ্রুতি দেন। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি দেশে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের ঘোষনাও দেন। কিন্তু ঘোষনার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তামাক কর নীতি প্রণয়ন হয়নি। এ বিষয়ে কোন উদ্যোও নেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি পূরণেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পূরণ ও নির্দেশ বাস্তবায়নে একটি শক্তিশালী ও সমন্বিত তামাক কর নীতি প্রণয়ন করা জরুরি।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে দশ টায় “কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী তামাক কর নীতি“’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) এর উদ্যোগে অনলাইন মিটিং সফটওয়্যার জুমে ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। তামাক কর নীতি প্রণয়ন হয়নি তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।
ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপি এর আহবায়ক ড. রুমানা হক। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আবদুল্লাহ, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা এবং ডাস এর প্রকল্প উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল। এছাড়া অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো তামাকজাত দ্রব্যের দাম ও কর বাড়িয়ে এর সহজলভ্যতাকে কমিয়ে আনা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করতে হলে আসন্ন অর্থবছর থেকে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও একটি শক্তিশালী জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন তামাক আইন সংশোধন করে দ্রুত সংসদে উপস্থাপন করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তারা আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে সে লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণে অতি সত্ত্বর জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে। যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপসহ, কর আদায় পদ্ধতি ও পর্যবেক্ষণ, ট্রাকিং ও ট্রেসিং, কর ফাঁকি বন্ধ, আমদানি-রপ্তানি, তামাক কর সংক্রান্ত প্রশাসনিক বিষয়াদিসহ তামাক কর সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়াদি যুক্ত থাকবে।
আলোচকরা আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনো ঘোষনা দিলে সেটা পালন করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু কর নীতি প্রণয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সেটারও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা এটার দায় এড়াতে পারে না। বিষয়টি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একই সঙ্গে বিইআর ও বিএনটিটিপি যৌথভাবে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তামাক কর নীতির যে খসড়া প্রস্তুত করেছে সেটা নিয়েও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রস্তুত করতে পারে।
এসময় আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, সুনির্দিষ্ট কর আরোপ, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিশ্চিত করা, তামাকজাত দ্রব্য থেতে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের একটি অংশ তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা প্রয়োজন