নির্দিষ্ট অভিযোগের পরেও গাংনীর সুদ ব্যবসায়ী নজরুল ও শফি বহাল তবিয়তে
মেহেরপুরের চোখ ডট কম, গাংনী :
মেহেরপুরের গাংনী উত্তরপাড়া সুদ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ও পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের শফির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। চড়া সুদে টাকা দেওয়ার বিনিময়ে তাদের কাছে জমা রয়েছে ভুক্তভোগীদের ব্যাংক হিসেবের বøাঙ্ক চেক। সুদ ব্যবসায় কুখ্যাতি পাওয়া এ দুজন তবুও তাদের সুদ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বহাল তবিয়তে। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর তারা আবারও প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা।
অভিযোগে জানা গেছে, ভোমরদহ গ্রামের শিউলী খাতুন ও লিলুফা খাতুন এবং তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের শরিফা খাতুন গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগে উত্তরপাড়ার সুদ কারবারী নজরুল ইসলাম ও আনারুল ইসলাম এবং পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের (৫নং ওয়ার্ড) মোঃ শফির বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে বøাঙ্ক চেক আটকে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে চড়া সুদ আদায়ের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, নানা আলোচনা সমালোচনা ও মিমাংসার নামে নানা নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পেরিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী ওই নারীদের মধ্য থেকে দুই জন বিজ্ঞ আদালতে গিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। জবানবন্দিতে তারা শুধুমাত্র গাংনী উত্তরপাড়ার আনারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। একইসাথে সুদ মামলায় জামিন পাওয়া আনারুল ইসলামের জামিন বাতিলের আদেশ চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এসআই আশিকুর রহমান। গেল ১১ এপ্রিল বিজ্ঞ আদালত সুনানি শেষে আনারুল ইসলামের জামিন আদেশ বাতিল করে তাকে পুনরায় জেলা কারাগারের হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিজ্ঞ আদালতের আদেশ আনারুল ইসলামকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।
এর আগে গত ১১ মার্চ গাংনী থানার এক যুগান্তকারী অভিযানে সুদ ব্যবসায়ী উত্তরপাড়ার আবু হানিফ ও আনারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পুলিশ বাদি হয়ে তাদের নামে বিভিন্ন ধারায় গাংনী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গত ২৯ মার্চ জামিনে মুক্তি পায় আনারুল ইসলাম।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী তিন নারী গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগে আনারুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও শফির নাম উল্লেখ করেন। কিন্তু আদালতে শুধুমাত্র আনারুলের বিপক্ষে অভিযোগ করেন। এর পেছনের নানা কারণ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুদ কারবারী উত্তরপাড়ার নজরুল ইসলাম ও পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের শফি এলাকার মধ্যে বড় সুদকারী ও তাদের নামের সঙ্গে কুখ্যাত সুদখোরের কুখ্যাতি রয়েছে। গেল ১১ মার্চ পুলিশের অভিযানে আনারুল ও আবু হানিফ গ্রেফতারের পর এ দুজনসহ উত্তরপাড়ার দুখী ও তার সঙ্গীয় কয়েজন আত্মগোপন করেছিলেন। বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে তারা এলাকায় ফিরে আসে বলে জনশ্রæতি রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম, দুখী ও শফি সুদ কারবারের মাধ্যমে অনেকটাই জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। সুদের টাকায় তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গাড়ী, বাড়ী আর সম্পদ বাড়লেও তাদের প্রকাশ্য কোন ব্যবসা বাণিজ্য নেই। ফলে সুদের টাকায় তারা এগুলো গুড়ে তুলেছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাদের মাধ্যমে এলাকার অসংখ্য মানুষ নিঃশ^ হলেও লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ দায়ের করেন না। অন্যদিকে সুদের টাকার বিনিময়ে তাদের কাছে রক্ষিত আছে সই করা সাদা স্ট্যাম্প, সই করা বøাঙ্ক চেকসহ বিভিন্ন গ্যারান্টি। এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন তাদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এসব কুখ্যাতি পাওয়া সুদ কারবারিরা। সুদ কারবারীদের বিরুদ্ধে মামলার পর কিছুদিন কারবার বন্ধ হলেও আবারও তারা স্বরুপে ফিরে গেছেন।
তবে সুদ কারবারী কেউ রেহাই পাবে না বলে হুশিয়ারি করেছেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।