এম চোখ ডট কম, আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সারা বিশ্বের মানুষের নজর এখন ইউরোপে। শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ইউরোপে এখন যুদ্ধের দামামা। গোলাবারুদ আর যুদ্ধবিমানের শব্দে আতঙ্ক চারিদিকে। কেন এই যুদ্ধ ? ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নেপথ্য কি ?
Table of Contents
উত্তেজনার শুরু
গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল টানটান উত্তেজনা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। আর এতে আগুনের মধ্যে পেট্রোল ঢেলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্যে। পশ্চিমা হুমকি তোয়াক্কা না করে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।
মূলত সংকটের শুরু নব্বইয়ের দশক থেকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যখন ইউক্রেন আলাদা রাষ্ট্র হয় তখন রাশিয়াপন্থী এবং পশ্চিমাপন্থী দুই রাজনৈতিক দল সক্রিয় হয়ে ওঠে দেশটিতে। ইউক্রেনের বেশিরভাগ মানুষ রাশিয়া ভাষাভাষী। অপরদিকে কিছু মানুষ পশ্চিমাদের সমর্থন করে। সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে তারা ন্যাটোর সাথে যোগ দিতে চায়। এই দুই মতাদর্শের মানুষ নিয়ে খোদ ইউক্রেন সরকার বেশিরভাগ সময় বিপাকে থাকে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট শুরু যেভাবে: ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তখন রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন সরকার প্রধানদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এরমধ্যে ইউক্রেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মাথাচাড়া দিতে থাকে। তাদের সমর্থন দেয় রাশিয়া। বিদ্রোহী অধ্যুষিত কিমিয়া অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা আর বিরোধ বাড়তে থাকে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট শুরু যেভাবে:
২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তখন রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন সরকার প্রধানদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এরমধ্যে ইউক্রেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মাথাচাড়া দিতে থাকে। তাদের সমর্থন দেয় রাশিয়া। বিদ্রোহী অধ্যুষিত কিমিয়া অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা আর বিরোধ বাড়তে থাকে।
ন্যাটো জোটে যেতে চাই ইউক্রেন:
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ন্যাটোর কি প্রয়োজন? এমন প্রশ্ন বিশ্ব দরবারে। এসবের তোয়াক্কা না করে পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো পূর্বদিকে অগ্রসর হতে থাকে। ইউরোপের অনেক দেশ ন্যাটো জোটের সাথে রয়েছে। ইউক্রেন যেতে চাই ন্যাটো জোটে। যা রাশিয়া ভালোভাবে নেইনি। কারণ পশ্চিমাদের আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ইউরোপে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার জন্য ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে যেতে নিষেধ করে রাশিয়া। তবে এ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কঠোর বক্তব্য দেওয়ায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেশি আগ্রহ ভালোভাবে নেয়নি রাশিয়া। বক্তব্য আর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যর মধ্য দিয়ে গত মাস থেকে ইউক্রেনের সীমান্তে সেনা জড়ো করা শুরু করে রাশিয়া। যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। ন্যাটো জোট থেকে ইউক্রেনকে ফেরানোই হচ্ছে হামলার নেপথ্য।
পশ্চিমাদের নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ:
ইউক্রেন যদি ন্যাটো জোটে যায় তাহলে পশ্চিমারা চলে আসবে রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি। এতে রাশিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। একটি শান্তিপূর্ণ এলাকায় পশ্চিমাদের সামরিক শক্তির ঘাঁটি রাশিয়া কেন সমর্থন করবে ? এমন প্রশ্ন রাশিয়ার সাধারণ মানুষের। ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি রাশিয়ার মানুষের অগাধ বিশ্বাস আর ভরসা। পশ্চিমাদের আগ্রাসন থেকে রাশিয়ার মানুষকে রক্ষা করার জন্য ভ্লাদিমির পুতিন তাদের একমাত্র ভরসা। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার জন্য ভ্লাদিমির পুতিন কখনো চায় না ন্যাটো জোট ঘরের কাছে আসুক। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বকে শাসন করার জন্য ন্যাটো জোট পূর্বদিকে সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রাশিয়ার।
যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিল রাশিয়া:
ন্যাটো জোট এবং পশ্চিমাদের আগ্রসন নিয়ে রাশিয়া বিশ্ব দরবারে বারবার আলোচনা করেছে। পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোর প্রধান এবং জাতিসংঘের কাছেও গিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া চেয়েছিল যুদ্ধ এড়াতে। আলোচনার মাধ্যমেই হুমকি সমাধান করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই আলোচনাতে ফল মেলেনি। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানো ছাড়া রাশিয়ার জন্য আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা:
ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। স্বাধীন রাষ্ট্র রাশিয়ার কাছে সামরিক শক্তির সহায়তার জন্য আবেদন জানায়। এর প্রেক্ষিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেখানে সেনাবাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দেন। আর এটিকে ইউক্রেন দখলের কূটকৌশল হিসেবে দেখছেন পশ্চিমারা। ফলে রাশিয়ার ওপর নেমে এসেছে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অবরোধের খড়গ। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের দিকে না গিয়ে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। স্বাধীন রাষ্ট্রকে সহযোগিতার অজুহাতে রাশিয়া রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে।
বেসামরিক মানুষজনকে রক্ষা করার জন্য ইউক্রেন সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন ইউক্রেন দখল করার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। অপরদিকে পশ্চিমারা এই অভিযান মোকাবেলার ঘোষণা দিচ্ছে। বিশ্বের মানুষের নজর এখন এদিকেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানালেও কোন ফল মিলছে না। তাই রাশিয়া এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন।
3 comments
[…] […]
[…] আরও পড়ুন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নেপ… […]
[…] […]