মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন বেশ জনপ্রিয়। সহজেই লেনদেন করার ক্ষেত্রে নানা কাজে এ সেবা বেছে নিচ্ছেন দেশের মানুষ। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ সেবা দিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নগদ। প্রতিষ্ঠানটি খুব অল্প সময়ে মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। এই লেখার মাধ্যমে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার প্রচেষ্টা মাত্র।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন সবার প্রয়োজন। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনারা সঠিক তথ্য পাবেন। এছাড়াও সময়ে সময়ে যখন আপডেট হবে তখনও আমরাও আপডে তথ্য নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। আজ আলোচনা করবো নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং
বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হচ্ছে এই নগদ। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ এর যাত্রা শুরু হয়। গ্রাহক সংখ্যা ৫.৮৫ কোটি এবং উদ্যোক্তা ২.৪০ লাখ। প্রত্যহিক লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা। কার্যক্রম শুরুর দুই বছরের মাথায় মিলে সফলতার অ্যাওয়ার্ড। ২০২১ সালে ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ড, ফিটনেস ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড, মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা থেকে আপনিও অনেক উপকৃত হতে পারবেন।
ডাক বিভাগের সেবা হওয়ায় অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্যে নগদের সেবা সহজ এবং সাশ্রয়ী। নিম্নের আলোচনায় নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা সমূহ তুলে ধরা হলো।
নগদ একাউন্ট দেখার নিয়ম
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা থেকে আপনার মোবাইলে একাউন্ট দেখার সুযোগ নিন। আপনার হাতে থাকা হ্যান্ডসেটে *১৬৭# ডায়াল করে একাউন্ট খুলতে পারবেন। এ কোড ডায়াল করলেই আপনি নগদে প্রবেশ করবেন।
প্রথম ধাপ, আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) স্ক্যান করে দিতে হবে। সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।
দ্বিতীয় ধাপ, সেলফি তুলতে হবে এবং স্ক্রিনে দেখানো জায়গায় ডিজিটাল স্বাক্ষর দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ, পিন সেট করতে হবে। ৪ ডিজিটের গোপন পিন সেট করতে হবে যা আপনার একাউন্ট পরিচালনার পিন বা পাসওয়ার্ড। এভাবেই আপনার একাউন্ট তৈরী করে নিতে পারবেন।
এছাড়াও স্মার্ট ফোনের জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
সেন্ড মানি খরচ সম্পূর্ণ ফ্রি
মোবাইল ব্যাংকিং এ সেন্ড মানি করতে অল্প কিছু খরচ হয়। সেক্ষেত্রে নগদ বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দিয়েই সেন্ড মানি চার্জ ফ্রি করেছে। নগদের এক একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে সেন্ড মানি করলে কোন চার্জ লাগে না।
প্রথমে কোড ডায়াল করে মোবাইল মেন্যু ওপেন করুন। এর পরে ২ চেপে যে মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠাবেন তা দিন এবং টাকার পরিমাণ দিন। রেফারেন্স হিসেবে কোন সংখ্যা বা অক্ষর দিন। এবার ইন্টার পিন এ আপনার গোপন পিন নম্বর দিন। এভাবেই সেন্ড মানি সম্পন্ন হবে।
সাশ্রয়ী ক্যাশ আউট চার্জ
এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আপনি প্রায় সব ক্ষেত্রেই অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন। সেন্ড মানির মতো ক্যাশ আউট চার্জও সাশ্রয়ী।
ক্যাশ আউট করতে *১৬৭# ডায়াল করে ১ এ ক্যাশ আউট রয়েছে। ১ চাপার পরে উদ্যোক্তা একাউন্ট নম্বর (এজেন্ট দোকানীর নম্বর) দিতে হবে। এর পরে টাকার পরিমাণ ও পিন নম্বর দিয়ে লেনদেন সম্পন্ন করুন।
অ্যাপের ক্ষেত্রেও একই। তবে উদ্যোক্ত নম্বর না দিয়ে উদ্যোক্তার QR স্ক্রান করেও সহজেই কাজটি করতে পারে।
নগদ মোবাইল রিচার্জ
মোবাইল রিচার্জের জন্য অনেকেরই দোকানে যাওয়ার সময় থাকে না। তাই মোবাইল ব্যাংকিং থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ রিচার্জ করে থাকেন। অর্থাৎ নিজের মোবাইল রিচার্জ করার সুবিধা বেশ কার্যকরী।
*১৬৭# ডায়াল করে ৩ চেপে মোবাইল রিচার্জ অপশনে যেতে হবে। এবার কোন অপারেটরে রিচার্জ করবেন তা সিলেক্ট করতে হবে (জিপি, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল ইত্যাদি)। পোস্ট পেইড/প্রিপেইড তা সিলেক্ট করুন। মোবাইল নম্বর এবং রিচার্জ পরিমাণ দিন। চার সংখ্যার গোপন পিন নম্বর দিয়ে ইন্টার দিলেই সাকসেসফুল ম্যাসেজ পাবেন। এভাবে হয়ে গেল আপনার মোবাইল রিচার্জ।
অপরদিকে অ্যাপস থেকেও একই প্রক্রিয়ায় রিচার্জ করতে পারবেন।
অর্থ বাণিজ্যের অন্য সংবাদ দেখতে পারেন।
ডোনেশন
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করে আপনি পাচ্ছেন ডোনেশন দেওয়ার সুযোগ। এই সেবার মাধ্যমে জাকাতের টাকা প্রদান করা যাবে। দুস্থ, অসহায় মানুষের সহযোগিতার উদ্দেশ্যে ডাক বিভাগের এই সেবা বেশ আকর্ষণীয়। অনেকে জাকাত ফান্ডে টাকা দিতে চান কিন্তু কোথায় কিভাবে দিতে তা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম,ইটস হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন (আইএইএফ), স্বপ্নযাত্রা, নোভেটিভ কনসালটেন্সি, বিদ্যানন্দ এক টাকার মিল, আই কেয়ার প্রোগ্রাম, ও ইউনিভার্সাল হেল্প হাব (ইএইচএইচ), আমার বাংলাদেশ ফেউন্ডেশন, জাগো ফাউন্ডেশন, হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, দরিদ্র চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি, সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, মজার স্কুল, কে কে ফাউন্ডেশন, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো নগদের সাথে যুক্ত রয়েছে। নগদ অ্যাপ থেকে জাকাত ফান্ডে ডোনেশন করতে পারেন।
কোড ডায়াল কিংবা অ্যাপ থেকে অন্যান্য লেনদেনের মতো একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি টাকা পাঠাতে পারবে।
কার্ড থেকে নগদ একাউন্টে টাকা প্রেরণ
এই সেবা হচ্ছে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা এর অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা থেকে আপনার ব্যাংকের মাস্টার কার্ড অথবা ভিসা কার্ড থেকে লেনদেন করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়ায় দিনে সর্বোচ্চ ৫ বার ৩০০০০ হাজার টাকা এড মানি করা যায়। এভাবে এক মাসে ২৫ বার এবং সর্বোচ্চ ২০০০০০ টাকা পর্যন্ত এড মানি করতে পারবেন।
নগদ অ্যাপ থেকে প্রথমে এড মানি সিলেক্ট করতে হবে। সিলেক্ট করুন কার্ড টু নগদ এবং নগদ একাউন্ট। এরপর মোবাইল নম্বর ও টাকার পরিমাণ দিন। কার্ডের CVV নম্বর দিন (কার্ডের পেছনে থাকে)।
এবার আপনার মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি কোড যাবে। কোড দেওয়ার পরে আপনার লেনদেন সম্পন্ন হবে। এর পরে কনফার্মেশন ম্যাসেজ পাবেন।
ব্যাংক থেকে নগদ টাকা ট্রান্সফার
কার্ড থেকে নগদ একাউন্টে টাকা প্রেরণে যে লিমিট রয়েছে ব্যাংক থেকে নগদে টাকা ট্রান্সফারের লিমিটও একই। এর জন্য আপনাকে অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। অতএব, অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি তৃপ্ত হবেন।
অ্যাপ থেকে প্রথমে এড মানি সিলেক্ট করে ব্যাংক টু নগদ অপশনে যেতে হবে। কোন ব্যাংক থেকে নিবেন তার নাম সিলেক্ট করুন। এবার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন। বেনিফিশিয়ারি ম্যানেজমেন্ট সিলেক্ট করে তারপরে এড বেনিফিশিয়ারি তে যান। এখানে ট্রান্সফার টু নগদ সিলেক্ট করুন। এখন নাম ও নগদ একাউন্ট নম্বর টাইপ করে নেক্সট চাপুন। সিলেক্ট করুন এমএফএস ট্যান্সফার। ট্যান্সফার টু নগদ সিলেক্ট করুন। এর পরে টাকার পরিমাণ দিয়ে ট্রান্সফার টু রিমার্কস এবং ওটিপি টাইপ সিলেক্ট করুন। এখন ট্রান্সফার সিলেক্ট করুন তাহলে কনফার্মেশন নোটিফিকেশন পাবেন।
মার্চেন্ট পে
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা থেকে আপনি এ সেবা নিয়ে ক্যাশলেস সুবিধা পাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নগদ মার্চেন্ট একাউন্ট রয়েছে। যে নম্বরে আপনার প্রয়োজনীয় কেনাকাটার টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়াও, ই-কমার্স সাইটগুলোতে নগদ একাউন্ট থেকে পেমেন্ট করতে পারবেন। আসুন দেখে নিই কিভাবে মার্চেন্ট পে করতে হয়।
ডায়াল কোর্ড থেকে এবং অ্যাপ থেকে পেমেন্ট করা যায়। এর জন্য আপনাকে যেতে হবে মার্চেন্ট পে তে। মার্চেন্ট নম্বর দিন এবং অ্যাপ হলে কিউআর কোর্ড স্ক্রান করতে পারেন। পরবর্তী ধাপে টাকার পরিমাণ ও আপনার পিন নম্বর দিলে প্রেমেন্ট সম্পন্ন হবে।
ক্যাশ ইন
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা থেকে আপনি পাচ্ছেন ক্যাশন ইন করার সুযোগ। নগদের যারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা করেন তাদেরকে উদ্যোক্তা বলা হচ্ছে। আপনার নগদ একাউন্টে ব্যালান্স প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি নিকটস্থ কোন উদ্যোক্তার কাছে গিয়ে টাকা জমা দিতে পারেন। দোকানী বা উদ্যোক্তা আপনার নম্বরে তার উদ্যোক্তা নম্বর থেকে টাকা ট্যান্সফার করে দিবেন। এখন আপনার একাউন্টের ব্যালান্স হিসেবে আপনি সুবিধামতো ব্যবহার করতে পারবেন।
বিল পে
ব্যস্ততার কারণে আপনি হয়তো ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। তাই বিল পে প্রক্রিয়া আপনার সময় ও কষ্ট দুটোই সাশ্রয় করতে পারে। বিল পরিশোধের দুঃসহ স্মৃতি আপনাকে আর তাড়িয়ে বেড়াবে না। নগদ বিল পে থেকে আপনি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, কোভিড টেস্ট, ভিসা ক্রেডিট কার্ড, একাদশে ভর্তি, ইন্সুরেন্স, কম্পিউটর কাউন্সিল, বিটিসিএল টেলিফোন ও ডোমেইন বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এখানে ৩৬ টি প্রতিষ্ঠানের বিল পে করার সুযোগ রয়েছে।
বিল পরিশোধের জন্য আপনাকে কোড ডায়াল কিংবা অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ডায়াল হলে ৫ চেপে বিল পে সিলেক্ট করতে হবে। অপরদিকে, অ্যঅপ হলে সরাসরি বিল পেতে ক্লিক করতে হবে।
এভাবে বিল পে তে গিয়ে যে বিল পরিশোধ করতে চান সেই সেবা (উদারণ ইলেক্ট্রিসিটি) সিলেক্ট করতে হবে। এবার সেই সেবার আপনার যে কাস্টমার নম্বর রয়েছে তা দিন। এর পরে মোবাইল নম্বর দিয়ে নেক্সট করুন। এবার বিলের পরিমাণ দিয়ে তার পরে পিন নম্বর দিন। এবার ট্যাপ করুন। এর পরে কনফার্মেশন ম্যাসেজ পাবেন। এবার বিল পরিশোধের রিসিট আসবে। এই রিসিট আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে। কেননা সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে যেকোন সময় রিসিট প্রদর্শন করতে হতে পারে।
হাতের মুঠোয় ব্যাংকিং সেবা। এই সেবা আরও সহজ এবং বিপুল মানুষকে একত্রিত করেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনের অন্যান্য কাজকর্মে গতি বাড়াচ্ছে এই সেবাগুলো। নিরাপদ লেনদেনের মাধ্যমে আমাদের জীবনের কাজকর্মগুলো আরও সুন্দর হবে। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা লেখনীর মাধ্যমে আপনাদের চলার পথে অনেক কাজে লাগবে বলে বিশ্বাস করি। আর সব কিছু আপডেট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকবেন আশা করি।
-এম এইচ মানিক