মাসুদ রানা, মেহেরপুর ॥ শীতকালীন সময়ে সুখসাগর ও দেশীয় পিঁয়াজের চাষ করে মেহেরপুরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে ভরা মৌসূমে ভারত থেকে পিঁয়াজ আমাদানি (এলসি) হওয়ায় লোকসানের মুখে চাষিরা। এবারও দাম না থাকায় পিঁয়াজ উত্তোলন করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। সংরক্ষনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ এমনটি জানিয়েছে কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের দাবি পেয়াজ সংরক্ষন করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে চাষীরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেহেরপুর, মুজিবনগরের শিবপুর, মোনাখালি, সোনাপুর, টেংরামারি, আশরাফপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি মাঠে চোখ তুলে তাকালেই দেখা যায় শুধুই পিঁয়াজের চাষ। পিঁয়াজের দাম না থাকায় হিমশম খাচ্ছে কৃষকেরা। তাদের অভিযোগ প্রতি বছরই ভরা মৌসূমে বাইরের দেশ থেকে প্রচুর পারমান পিয়াঁজ আমদানি করা হয়। যার প্রভাব পড়েছে এ জেলায়। বিঘা প্রতি জমিতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে পিয়াজ চাষে। কিন্তু কাঙ্খিত দাম পাওয়া নিয়ে হাশায় রয়েছে চাষিরা।
১০ বছর আগে ভারত থেকে সুখসাগর ও তাহেরপুরী পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কৃষকরা। কয়েক বছর ধরে এ জেলার কৃষকরা নিজস্ব প্রযুক্তিতেই বীজ তৈরি করে সুখসাগর পেঁয়াজের চাষ করছেন । এই পেঁয়াজ দেশীয় পেঁয়াজের চেয়ে আকারে দুই থেকে তিন গুণ বড়। বিঘায় ফলন হয় ১৫০ থেকে ২০০ মণ। পেঁয়াজের মৌসুমে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজার দখল করে মেহেরপুরে উৎপাদিত এই সুখসাগর পেঁয়াজ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এ জাতের মধ্যে সুখসাগরই ২ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে পেয়াজ চাষ করেছে কৃষকেরা। গত বছরে জেলায় ২ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে পেয়াজঁ চাষ হয়েছিল।
করোনার সময় পেঁয়াজের দাম ছিলো অনেক বেশী। এই জন্য শীতাকলীন পেঁয়াজ চাষ করার সময় বেশী দাম দিয়ে বীজ ক্রয় করতে হয়েছে। এ বছরে জমিতে যে পরিমান খরচ হয়েছে আসল টাকা ঘরে আসবে কিনা শঙ্কায় রয়েছে চাষিরা।
শিবপুর গ্রামের পেয়াজচাষী জিয়াবুল ইসালাম বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পেয়াজঁ চাষ করছি। গতবছর আমি ২০ বিঘা জমিতে পেয়াজ চাষ করেছিলাম। এবছরে আমি ১৭ বিঘা জমিতে সুখসাগর পেয়াজের চাষ করেছি। পেয়াজের চাষ এ মাঠে ভালোই হয়। এবছরেও ভালো ফলন হরে আশার রাখছি। গতবছরে পেয়াজের দাম খুব একটা ভালো পাইনি। এবছরে যদি সরকার বাহিরে থেকে পেয়াজ না নিয়ে আসে তাহলে আমরা পেয়াজে লাভবান কবো।
পেয়াজচাষী নুরুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরই আমি ২০-২২ বিঘা জমিতে পেয়াজের চাষ করি। সরকার যদি চাষিদের দিকে একটু তাকিয়ে ভারতের এলসি বন্ধ করে তাহলে বাহিরে থেকে পেয়াজ নেয়া লাবেনা। আমরা দেশে যারা পেয়াজ চাষ করি এতে ভালো মতো পুশিয়ে নিতে পারবে। সেই সাথে দেশের বাহিরে পেয়াজ রপ্তানি করতে পারবে সরকার। তা না হলে কৃষক মাঠে মারা যাবে । পেয়াজ চাষ থেকে সরে দাড়াবে চাষীরা।
মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক এরশাদ বিশ^াস জানান, লাভের আসায় এবার অনেক জমিতে শীতকালীন তাহেরপুরী ও সুখসাগর পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। বেশী টাকা দরে বীজ কিনে খরচ করেছে পেঁয়াজ চাষে। দাম ভালো দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়বে তারা। তার মত একই অবস্থা মেহেরপুরের শত শত কৃষকের।
নতুন উদ্যোক্তা ডালিম সানোয়ার পেয়াজচাষী তিনি বলেন, আমরা যারা লেখাপড়া শেষ করে কৃষি কাজ হাতে নিয়েছি। আশারা রাখি সাফল্য আসবে। আমদের মুজিবনগরে প্রচুর পরিমান পেয়াজের চাষ হয়। পেয়াজের কিছুটা মাথা পোড়া রোগ দেখা গেলেও ফলন যদি ভালো হয় তাহলে লাভবান হবো । চাষীরা ধার দেনা করে যে এই ব্যয়বহুল সুখসাগর পেয়াজের চাষ করছে। সরকার যদি এই কৃষকদের দিকে না তাকায় তাহলে চাষীরা কুষি কাজ থেকে সরে যাবে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরে মাটি অত্যান্ত ভালো। কৃষি উর্বর জমি। কৃষকেরা যাতে লাভবান হয় সেই জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। সর্বাক্ষন আমাদের মাঠ পর্যায়ে উপ কৃকির্মকর্তা কৃষকদের পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছে। এবছরে মেহেরপুর ২২২০ হেক্টর সুখসাগর পেয়াজ এবং ৮৩০ হেক্টর দেশীয় পেয়াজের চাষ হচ্ছে। সারা দেশে এ জাতের পিঁয়াজের চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষকদের লোকসানের কথা মাথায় রেখে পিয়াজটি সংরক্ষনের জন্য গবেষনা অব্যহত আছে বলেও দাবি এ কৃষি কর্মকর্তার।
মেহেরপুরে সুখসাগর পেঁয়াজ চাষে ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা
385