এম চোখ ডট কম, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিভিন্ন সময়ে ন্যাটো জোট নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের সামরিক শক্তি নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ অনেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতিতে আবারও আলোচনায় ন্যাটো জোট। আসুন জেনে নেওয়া যাক ন্যাটো কি?
ন্যাটো কি:
ন্যাটো হচ্ছে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট। ইংরেজীতে North Atlantic Treaty Organization (NATO) । ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল ন্যাটো জোট গঠন হয় ১২টি দেশ নিয়ে। লস ইসমে ছিলেন ন্যাটোর প্রথম মহাসচিব। বর্তমান মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবারগ। এ জোটের সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর খরচ পৃথিবীর সকল দেশের সামরিক খরচের প্রায় ৭০ ভাগ। অপরদিকে এর চেয়ে এতো শক্তিশালী সামরিক জোট আর নেই।
ন্যাটো কেন গঠন হয় :
পারস্পারিক সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার অঙ্গিকার নিয়ে ন্যাটো জোট গঠন করা হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত উত্তর আমেরিকা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও কানাডা এবং ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ হচ্ছে ন্যাটো জোটের সদস্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সামরিক দুই জন কমান্ডারের নেতৃত্বে এর সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। মূলত রাশিয়া ও জার্মানদের দমিয়ে রাখার জন্যই ন্যাটো গঠন হয়েছিল বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
ন্যাটো জোটের সদস্য :
১২ টি দেশ নিয়ে ন্যাটো প্রতিষ্ঠা হয়। সদর দপ্তর ছিল ফ্যান্সের প্যারিসে। বর্তমানে সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্যাসেলসে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে এর সদস্য দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ন্যাটো জোটের সদস্য সংখ্যা ৩০। এর মধ্যে আলবেনিয়া ও তুরস্ক কেবল মুসলিম দেশ।
ন্যাটোর সদস্য দেশ কয়টি :
প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য ১২ টি দেশ। বাকি ১৮টি দেশ পরবর্তীতে সদস্য পদ লাভ করেছে।
প্রতিষ্ঠানকালীন দেশগুলো হচ্ছে- বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইটালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
সদস্য দেশ- গ্রীস, তুরস্ক, জার্মানী, স্পেন, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরী, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোনানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, আলবেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মন্টিনিগ্রো ও উত্তর মেসিডোনিয়া।
উত্তর মেসিডোনিয়া হচ্ছে ন্যাটোর সর্বশেষ সদস্য রাষ্ট্র।
সুত্র উইকিপিডিয়া:
ন্যাটো কোন ধরনের জোট:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে নিয়ে ন্যাটো গঠন হয়। মূলক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের হাত থেকে ইউরোপ ও পশ্চিম বার্লিন রক্ষায় কাজ শুরু করে ন্যাটো জোট। জোটভুক্ত প্রতিটি দেশ ন্যাটেতে সামরিক শক্তির জন্য অর্থ, সামরিক বাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে থাকে। ন্যাটোর প্রয়োজনে তারা এগুলো দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। অপরদিকে ন্যাটোর কাছ থেকেও জোটভুক্ত দেশগুলো সামরিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা পেয়ে থাকে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নেপথ্য পড়তে ক্লিক করুন:
ন্যাটোর সামরিক অভিযান:
ন্যাটোর নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কোন দেশ আক্রমণ হলে তাদের জোট আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে হামলা প্রতিরোধে জোটের সদস্য সকল দেশ তা মোকাবেলা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ১৯৯২ সালে বসনিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে ন্যাটো জোট প্রথম কোন সামরিক অভিযানে অংশ নেয়। ১৯৯৯ সালে কসোভো এবং ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশ নেয়। এছাড়াও ৯/১১ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর ন্যাটো জোট বিভিন্ন অভিযানে অংশ গ্রহণ করেছিল। যার মধ্য দিয়ে শক্তি জানান দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে বিশ্বের কাছে এই জোটের গুরুত্বপুর্ণ বেড়ে যায়।
ন্যাটোর সামরিক শক্তি:
বর্তমানে ন্যাটোজুক্তভুক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যা ৯৪১.৪৬ মিলিয়ন। সক্রিয় সৈন্য রয়েছে ৩৬ লক্ষ ৫৭ হাজারের উপরে। সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে কমবাট ট্রাক ২০ হাজার ৭৪১টি, আরমার্ড ভিকেল ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩৫ টি, এপিসি ১৭ হাজার ৯২১টি, মার্প ১৯ হাজার ৬২৭টি, আর্মাড কার ১ লাখ ৯ হাজার ৭১২টি, টোটাল আর্টিলারি ১৩ হাজার ৫১৯টি, রকেট প্রজেক্টরস ৪ হাজার ৭৮১টি, এয়ারক্রাফট ২১ হাজার ৭২৯টি, ফাইটার এয়ারক্রাফট ৩ হাজার ৭০২টি, এ্যাটার্ক এয়ারক্রাফট ৩ হাজার ৬০১টি, ট্রেইনার এয়ারক্রাফট ৪ হাজার ৫৭৩টি, মোট হেলিকপ্টার ৮ হজার ৬৭০টি, এ্যাটার্ক হেলিকপ্টার ১ হজার ৮৫১টি, বোমারু বিমান ১৩৮টি, স্টিল্টথ বোমারস ২০টিসহ বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ জাহাজ ও পরমানু অস্ত্র।
এককথায় বলতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট পৃথিবীর যেকোন স্থানে নিমিষেই অভিযান চালানোর সক্ষমতা রাখে। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর রক্ষার পাশাপাশি বিশে^র কোন শক্তিধর দেশ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য এ জোটকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। চীন, পাকিস্তান আর রাশিয়া রয়েছে জোটের বাইরে। ফলে এই দেশগুলোকে ন্যাটো জোট তাদের জন্য হুমকি মনে করে। যার ফলে মাঝে মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
1 comment
[…] আরও পড়ুন রাশিয়ার শত্রু ন্যাটো ব্রিট্রিষ সংবাদ মাধ্যমগুলো আংশকা প্রকাশ করে বলেছে, রাশিয়া যেকোন সময় ইউক্রেনে এই বোমা হামলা চালাতে পারে। ফাদার অব অল বোম্বস পরমাণু অস্ত্রের চেয়ে কম শক্তিশালী নয়। […]